চার দফা দাবিতে দেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকেরা গতকাল সোমবার লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করেছেন। এর ফলে ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গতকালের বার্ষিক পরীক্ষা হয়নি। অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে গিয়ে ফিরে যায়।তবে বিচ্ছিন্নভাবে কোনো কোনো সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা হয়েছে। কোথাও কোথাও কর্মচারীদের পাহারায় শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।অন্যদিকে তিন দফা দাবিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের একাংশ কর্মবিরতি পালন করছে। গতকাল থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে।বার্ষিক পরীক্ষার মধ্যে শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
এদিকে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার বলেছেন, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা দেশের বিভিন্ন স্থানে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বন্ধের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সরকারি কর্মচারী বিধি লঙ্ঘনের দায়ে তাঁদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। গতকাল সন্ধ্যায় বাসসকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আন্দোলনের নামে যা করছেন, তা সরকারি আচরণবিধি লঙ্ঘনের শামিল। সরকারি আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য আপনাদের কিন্তু তৈরি থাকতে হবে। এখানে সরকার একেবারে দৃঢ়ভাবে তার অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে।
মাধ্যমিকে কর্মবিরতি
বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) শিক্ষা পরিসংখ্যান ২০২৪ অনুযায়ী, সারা দেশে ১৯ হাজার ১১৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৬৩১টি সরকারি। মাধ্যমিকে মোট শিক্ষার্থী প্রায় ৭৯ লাখ, যার মধ্যে সরকারি বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থী ৪ লাখ ৮৬ হাজারের বেশি। সরকারি মাধ্যমিকে মোট শিক্ষক ১৩ হাজারের বেশি।চার দফা দাবিতে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আন্দোলন করছেন। সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির ব্যানারে চলা এ কর্মসূচির দাবিগুলো হলোএক. সহকারী শিক্ষক পদকে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারভুক্ত করে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গেজেট প্রকাশ।দুই. বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় কর্মরত শিক্ষকদের শূন্য পদে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন দ্রুত কার্যকর করা।
তিন. সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে বকেয়া টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের মঞ্জুরি আদেশ দেওয়া।চার. ২০১৫ সালের আগের মতো সহকারী শিক্ষকদের ২ থেকে ৩টি ইনক্রিমেন্টসহ অগ্রিম বর্ধিত বেতন-সুবিধা বহাল করে গেজেট প্রকাশ।সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দাবির বিষয়ে তাঁরা প্রথমে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। দাবি না মানায় লাগাতার কর্মবিরতিতে গেছেন।কর্মবিরতির কারণে বিভিন্ন বিদ্যালয় রোববার নোটিশ দিয়ে গতকালের পরীক্ষা স্থগিত করে। আবার কোথাও শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে গিয়ে জানতে পারে পরীক্ষা হবে না। রাজধানীর গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলে পড়ুয়া এক ছাত্রের বাবা গণমাধ্যমকে বলেন, তাঁর সন্তান বিদ্যালয়ে গিয়েও ফিরে এসেছে। বিদ্যালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক জানান, তাঁরা মৌখিকভাবে পরীক্ষা না হওয়ার কথা জানিয়েছেন।
ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল আগের দিন নোটিশ দিয়ে একই ঘোষণা দেয়। খুলনার সরকারি করোনেশন গার্লস হাইস্কুলেও পরীক্ষা হয়নি বলে একজন শিক্ষক জানান।খুলনা জিলা স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সরফুদ্দিন আয়ান বলে, আজ গণিত পরীক্ষা ছিল, তবে হবে না এটা জানতাম না। এসে দেখি পরীক্ষা হচ্ছে না। খুলনার আরও কয়েকটি সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে একই পরিস্থিতি দেখা যায়। রাজশাহী, যশোর, কুমিল্লা, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন এলাকার পরীক্ষায় বিঘ্ন ঘটেছে।গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে দেখা যায়, বেশ কিছু ছাত্র বিদ্যালয় চত্বরে দাঁড়িয়ে আছে। অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্র জানায়, তাদের পরীক্ষা কর্মচারীদের মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে। পরে জানা যায়, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষা কর্মচারীরা নিয়েছেন, তবে দশম শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষা হয়নি। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তাহমিনা ইয়াসমিন বলেন, আদিষ্ট হয়ে বিধি মোতাবেক পরীক্ষা কার্যক্রম চলমান রেখেছেন।
মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে গতকাল পরীক্ষা ছিল না।
সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সমন্বয়ক মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, কর্তৃপক্ষ যদি ডেকে দাবিগুলো পূরণের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দেয়, তাঁরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করবেন। অন্যথায় তাঁদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চলবে।