নন-এমপিও শিক্ষকদের মানবেতর জীবনযাপনঢাকা ত্যাগ করেছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রীভূমিকম্প হয়, আলোচনা হয়, প্রস্তুতি নেওয়া হয় নাপেরুর সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেটসি শ্যাভেজের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ‌‍ ‘সেনাবাহিনী পদক’পেলেন সেনাপ্রধান
No icon

নন-এমপিও শিক্ষকদের মানবেতর জীবনযাপন

দেশের নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বর্তমানে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন। যাঁদের হাতে গড়ে ওঠার কথা ছিল ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, সেই শিক্ষকরাই বছরের পর বছর বিনা বেতনে কিংবা নগণ্য সম্মানী পেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই করছেন। কেউ মসজিদে ইমামতি করছেন, কেউ আদালতে মুহুরির কাজ নিচ্ছেন, কেউ বা চালাচ্ছেন ছোট দোকান। আর এই দুর্দশার মূল কারণ দীর্ঘদিন ধরে এমপিওভুক্তির অচলাবস্থা এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় স্থবির হয়ে থাকা সরকারি নীতিমালা।নন-এমপিও হওয়ার দীর্ঘসূত্রতা ও বঞ্চনা দেশে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাঠদানের অনুমতি পেলেও এমপিওভুক্ত হতে দীর্ঘ প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ধাপ অতিক্রম করতে হয়। ডকুমেন্ট বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড পরিদর্শন, রিপোর্ট ও পুনর্মূল্যায়নের প্রক্রিয়া পার হওয়ার পর তিন বছর পর পাওয়া যায় একাডেমিক স্বীকৃতি; যা এমপিওভুক্তির প্রথম শর্ত।

কিন্তু ২০২১ সালের আগের নীতিমালাকে পাশ কাটিয়ে নানা সময় রাজনৈতিক বিবেচনায় এমপিও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এমপিদের ডিও লেটারের প্রভাবে নিয়মবহির্ভূতভাবেও প্রতিষ্ঠান এমপিও পেয়েছে। ফলে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় প্রতিষ্ঠিত বহু প্রতিষ্ঠান পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক বৈষম্যের কারণে এমপিও থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৩ হাজার নন-এমপিও প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যাদের অনেকেই দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বঞ্চনার চক্রে ঘুরছেন।

দুই দশকেও এমপিওভুক্ত নয় পবার টিকর কলেজ

রাজশাহীর পবা উপজেলার কে এইচ টিকর কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৩ সালে।দুই দশক পার হলেও এখনও এমপিওভুক্ত হয়নি। বাংলা বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, শিক্ষকতা করার স্বপ্ন নিয়ে যোগ দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম পাঁচ-ছয় বছরের মধ্যে এমপিও হবে। কিন্তু ২০ বছরেও হলো না। এখন মসজিদে ইমামতি করি, টিউশনি করে কোনোমতে সংসার চালাই। সন্তানদের স্কুল ফি দিতে না পেরে অনেক সময় লজ্জায় লুকাতে হয়। তাঁর চার সদস্যের পরিবার। মাঝেমধ্যে স্কুল থেকে বকেয়া টাকার জন্য ফোন আসে; তিনি বলেন, মসজিদের ঘরে বসে দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কিছু করার থাকে না। আইসিটি শিক্ষক এখন আদালতের মুহুরি

একই কলেজের আইসিটি লেকচারার মোহাম্মদ মাসুদ পারভেজ জানান, বিনা বেতনে দীর্ঘদিন টিকে থাকা সম্ভব না হওয়ায় তিনি রাজশাহী আদালতে মুহুরির কাজ শুরু করেছেন। তিনি বলেন, অফিস শেষে কলেজে গিয়ে পড়াতে হয়। শিক্ষার্থীদের সামনে দাঁড়ালে মনে হয়, আমি দুই আলাদা মানুষ। একজন শিক্ষক, আরেকজন জীবিকার যুদ্ধ চালানো শ্রমিক। তিনি আরও জানান, চাকরির শুরুতে পরিবারের জন্য বড় স্বপ্ন ছিল, এখন মাস শেষে মায়ের ওষুধের খরচই সামলাতে পারেন না।