জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধে পাঁচ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত রাজসাক্ষী সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এখন গাজীপুরের বিশেষ কারাগারে আছেন। দণ্ড পাওয়ার কারণে কারাবিধি অনুযায়ী কারাগারে তার ডিভিশন-১-এর সুবিধা বাতিল হয়ে যাবে। তিনি ডিভিশন ২-এর সুবিধা পাবেন। তবে তাকে কয়েদির পোশাক পরিধান করতে হবে। এদিকে মামুনের বিরুদ্ধে আরও অন্তত ১৬০টি মামলা রয়েছে। পুলিশ ও কারা-সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।এ ব্যাপারে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোতাহের হোসেন বলেন, ডিভিশন-১-এ থাকা কোনো বন্দির সাজা হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাকে ডিভিশন-২-এর আওতায় নিতে হয়। সাজাপ্রাপ্ত কয়েদির পুনরায় ডিভিশন-১ সুবিধা পাওয়ার সুযোগ নেই। সাবেক আইজিপি মামুন এখন তার ডিভিশন সুবিধা বলবৎ থাকার ব্যাপারে আবেদন করতে পারেন। এতে সরকার অনুমোদন দিলে তিনি ডিভিশন-২ সুবিধা পাবেন। আর অনুমোদন না দিলে সাধারণ কয়েদি হিসেবে থাকতে হবে।বিচারাধীন মামলায় কারাবন্দিদের সামাজিক সম্মান ও মর্যাদার ভিত্তিতে ডিভিশন সুবিধা দেওয়া হয়। কারাবিধি অনুযায়ী তিন ধরনের ডিভিশন থাকে। ডিভিশন-১, ডিভিশন-২ ও ডিভিশন-৩। সরকারের প্রকাশিত ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের ১
থেকে ১৮ নম্বর পর্যন্ত অবস্থানে ছিলেন এমন ব্যক্তিরা প্রথম শ্রেণির বন্দি হিসেবে ডিভিশন পান। এ ছাড়া বীরউত্তম, বীরবিক্রম, বীরপ্রতীক মর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তি, সিআইপি, স্বাধীনতা পদক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তি, প্রফেসর অব ইমেরিটাস নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিরা ডিভিশন-১ পান। আর সামাজিক মর্যাদা, শিক্ষা এবং অভ্যাসের কারণে জীবনযাপনের ধরন বিবেচনা করে অন্য উচ্চমানের বন্দিদের ডিভিশন-২ দেওয়া হয়।সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক মামুনের আইনজীবী জায়েদ বিন আযাদ বলেন, রায় ঘোষণা হলেও সাবেক আইজিপি মামুনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আপিল করতে কোনো ধরনের নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। রায়ের অনুলিপি পেতে কয়েক দিন দেরি হবে।জায়েদ বিন আযাদ বলেন, ট্রাইব্যুনালে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আরও একটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা রয়েছে, যা তদন্তাধীন। এ ছাড়া বিভিন্ন আদালত ও থানায় তার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা হয়েছে বলে জানান এই আইনজীবী।সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক মামুনের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন থানা ও আদালতে দেড়শর বেশি মামলা রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হত্যাসহ বিভিন্ন গুরুতর অপরাধে বিচারের জন্য অনেক সময় আসামিদের মধ্যে একজনকে রাজসাক্ষী করা হয়। গণহত্যার দায় স্বীকার করে সাবেক আইজিপি রাজসাক্ষী হতে চাইলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলার আসামি ডিএমপির সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ। তার বিরুদ্ধে মামলা অন্তত ১৭৫টি।আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে করা মামলার রায় দেওয়া হয়। ট্রাইব্যুনাল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরও কয়েকজন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার দেখায়। তাদের মধ্যে আছেন ডিএমপির সাবেক উপকমিশনার মো. জসীম উদ্দীন মোল্লা, পুলিশ সুপার তানভীর সালেহীন, মহিউদ্দিন ফারুকী, এস এম তানভীর আরাফাত, আসাদুজ্জামান, আব্দুল্লাহিল কাফী, জুয়েল রানা প্রমুখ।বাংলাদেশ পুলিশের ২৯তম মহাপরিদর্শক ছিলেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। ১৯৮২ সালে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন তিনি। ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি পুলিশ মহাপরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পান। এর আগে তিনি র ;্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।