জুলাই অভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনতে আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে বাংলাদেশ। ঢাকা ও দিল্লির মধ্যকার প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাদের ফেরত আনতে চিঠি প্রস্তুত করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলেও নোটিশ পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভারতকে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের চিঠির সঙ্গে রায়ের অনুলিপি পাঠানো হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ রায় পাঠাবে না। নোট ভারবাল (চিঠি) হিসেবে পাঠানো হবে। চিঠি দেওয়া হয়েছে কিনা উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, প্রস্তুত হচ্ছে। হয়তো আজকে (মঙ্গলবার) পাঠানো হবে।বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্দিবিনিময় সহজ করতে ২০১৩ সালের ২৮ জানুয়ারি বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি হয়। এর প্রায় আড়াই বছর পর প্রথম বন্দি হস্তান্তরের ঘটনা জানা যায়। ২০১৫ সালে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে হস্তান্তর করা হয় অনুপ চেটিয়া ও নূর হোসেনকে। এর প্রায় এক যুগ পর প্রত্যর্পণ চুক্তি আলোচনায় এলো ভারতে আশ্রয় নেওয়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর। তবে এ চুক্তির অধীনে ভারত শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানকে ফেরত দেবে কিনা, তা নিয়ে একাধিক মত রয়েছে। বাংলাদেশ মনে করে, ভারত যদি সততার সঙ্গে এই চুক্তিকে দেখে, তাহলে ভারত অবশ্যই তাদের ফেরত দিতে বাধ্য। কিন্তু ভারতীয় বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, ভারত শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করবে না। কারণ তাঁর বিরুদ্ধে আদালতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাশিত ছিল। ভারত তার দীর্ঘদিনের মিত্রকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবে না। তবে দণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিদের ফেরত না দিলে দিল্লি কূটনৈতিক টানাপোড়েনে পড়বে বলে মনে করেন কয়েকজন ভারতীয় কূটনীতিক।
ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, গতকাল মন্ত্রণালয়ের লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স অনুবিভাগ ভারতের জন্য প্রস্তুত করা নোট ভারবালের আইনি সব দিক চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছে। এটি প্রস্তুত করার পর দিল্লির উদ্দেশে পাঠানোর জন্য পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র সচিবের ছাড়পত্র নেওয়া হয়েছে।এদিকে, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলে নোটিশ পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম। গতকাল ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। যদিও এর আগে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ড পাওয়া ৬২ জনকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশের ফেরানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেও সফল হয়নি তৎকালীন সরকার।গতকাল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর গাজী তামিম বলেন, রায় ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে আপিল না করলে দণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনার আপিলের সুযোগ থাকবে না। যদি তারা ৩০ দিনের মধ্যে আপিল না করেন, তাহলে তারা গ্রেপ্তার হলেই রায় কার্যকর হবে।পলাতক এ দুই আসামির বিরুদ্ধে আগেই একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানাসহ রেড নোটিশ জারির আবেদন করা আছে। এখন গ্রেপ্তারি পরোয়ানার পরিবর্তে কনভিকশন ওয়ারেন্ট বা সাজার পরোয়ানা দিয়ে ইন্টারপোলে আরেকটি নোটিশ জারির জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তা ইন্টারপোলে যাবে। এ নিয়ে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বিভাগ।
গাজী তামিম বলেন, পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায় সোমবার ঘোষিত হয়েছে। এ রায়ের একটি সার্টিফায়েড কপি পাবে প্রসিকিউশন। একই সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া আসামিও পাবেন। এ ছাড়া পলাতকরা যদি ৩০ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ বা গ্রেপ্তার হন, তাহলে তারাও বিনামূল্যে একটি কপি পাবেন। কবে নাগাদ রায়ের কপি পাঠানো হবে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর বলেন, কিছু দাপ্তরিক কার্যক্রম সম্পন্ন হলেই যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে চলে যাবে।মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বিচারে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডাদেশ হয়েছে। তারা দুজনেই ভারতে আছেন। অপর আসামি রাজসাক্ষী সাজাপ্রাপ্ত সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পাঁচ বছর সাজা হয়েছে। আইন অনুযায়ী, দণ্ডিত পলাতক ব্যক্তিদের আপিল করার সুযোগ নেই। আপিল করতে হলে ৩০ দিনের মধ্যে তাদের বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে। তার পরই তাদের পক্ষে আইনজীবী আপিল করতে পারবেন। আর আইনি প্রক্রিয়ার শেষ ধাপ হিসেবে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ পাবেন।