দুপুরের মধ্যে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টির আভাসইরানে ইসরায়েলি হামলায় দুই পরমাণুবিজ্ঞানী নিহতআলোচনার কেন্দ্রে নির্বাচনের সময়ত্রাণের আশায় গিয়ে প্রাণ গেল আরও ৪০ ফিলিস্তিনিরবাংলাদেশে চীনের প্রভাববলয়ে সামঞ্জস্য আনতে কাজ করব
No icon

জুলাই সনদ ঘোষণা করে তার ভিত্তিতে নির্বাচন

আগামী জুলাই মাসে দেশের সব রাজনৈতিক দলের উপস্থিতিতে জুলাই সনদ ঘোষণা করে তার ভিত্তিতে নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।গতকাল বুধবার লন্ডনে যুক্তরাজ্যের নীতিগবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স আয়োজিত সংলাপে অংশ নিয়ে এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে তিনি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা ও তার প্রতিক্রিয়া, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কসহ নানা বিষয়ে তাঁর অবস্থান তুলে ধরেন। জবাব দেন বিভিন্ন প্রশ্নের।আগামী বছর এপ্রিলের শুরুতে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। সেনাবাহিনী ও কিছু রাজনীতিক এ বছরের মধ্যে নির্বাচন চান। অন্যতম বড় দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেওয়া অনিশ্চিত। সব মিলিয়ে অনেকেই বলছেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না এমন প্রসঙ্গ তুলে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় অধ্যাপক ইউনূসের। জবাবে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন হবে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সুন্দর নির্বাচন। সময় ঠিক ও জনগণ প্রস্তুত।

ড. ইউনূস বলেন, ১৭ বছর পর একটি সত্যিকার নির্বাচন হতে যাচ্ছে। জনগণ সত্যিই ভোট দিতে যাচ্ছে। নতুন ভোটাররা দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেছে ভোট দেওয়ার জন্য। তাদের কণ্ঠকে কখনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। সে নিয়েই বেশ আগ্রহ তৈরি হয়েছে। আগামী নির্বাচন একটা নতুন সরকারের জন্য রুটিন ভোট নয়। এটা নতুন বাংলাদেশের জন্য ভোট।প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যেসব তরুণ জীবন দিয়েছে, আমরা এই অঙ্গীকার করেছি তাদের স্বপ্নকে সম্মান করব। আমরা পুরোনো বাংলাদেশকে বিদায় বলে নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে চাই। নতুন বাংলাদেশের জন্য তিনটি বিষয় চিহ্নিত হয়েছে। একটি হলো সংস্কার। আমরা সব প্রতিষ্ঠান সংস্কার করতে চাই। সে জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য কমিশন করেছি, যাতে মৌলিক পরিবর্তন করা যায়। অনেক সুপারিশ এসেছে। নির্বাচন, সংসদ, সংবিধান, সিভিল সার্ভিসসহ সবকিছু সংস্কার। আমাদের কাজ হলো সব দলের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, কখনও শুনেছেন এমন কমিশনের কথা? তারা সবার সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করবে সব দল কোন সুপারিশগুলো গ্রহণ করবে। বাংলাদেশের রাজনীতিক ও দলগুলোর একমত হওয়া কঠিন কাজ।এই জবাবের পিঠে প্রশ্ন আসে, দলগুলো তো বলতে পারে, এই প্রক্রিয়ার মধ্যে গণতান্ত্রিক উপাদান নেই। আপনি ভোটারদের ওপর আস্থা রাখছেন না কেন? এসব সিদ্ধান্তের জন্য ভোটারের ওপর নির্ভর করছেন না কেন? কমিশনের চেয়ে ভোটারের কাছে যাওয়াই তো ভালো।জবাবে ড. ইউনূস বলেন, এমনটা যদি তারা পারতেন তাহলে ভালো হতো। কিন্তু অনেক জটিল বিষয় রয়েছে। শেষ পর্যন্ত আপনি কত টাকা দেবেন, আমি ভোট দেব। টাকা দেবেন, ভোট দেব। ভোটের বিষয়টি এমন হতে পারে। আমরা সেদিকে যেতে চাই না। ভোটাররা এ বিতর্ক প্রতিদিন দেখছে। আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো, সব দলের সম্মতিতে পাওয়া সুপারিশগুলো আলাদা করা এবং এর পর সব দলের স্বাক্ষরের মাধ্যমে এটি উদযাপন করা। জুলাই সনদ জাতির কাছে উপস্থাপন করা হবে এবং তার ভিত্তিতে নির্বাচন হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।

পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের অংশ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, নেই; একবারেই নেই। আমার সহকর্মীরাও (অন্য উপদেষ্টারা) বোধ হয় তা হতে চাইবেন না।বর্তমান সরকারের সময় সংবাদমাধ্যমের ওপর বলপ্রয়োগের অভিযোগ নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকারের সময়েই সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছে সংবাদমাধ্যম। আগে কখনও এমনটি ছিল না।সংস্কারের ইস্যুগুলোতে গণভোট দেওয়া হচ্ছে না কেন এ প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, অনেকে মনে করেন, গণভোট অর্থহীন। কারণ অনেকেই বুঝবে না কেন গণভোট। সে কারণে সংস্কার বিষয়ে সব দল সম্মত হলে সেটা হবে বেশি বাস্তবভিত্তিক।অধ্যাপক ইউনূস জানান, সংস্কার, সব অপরাধীর বিচার এবং নির্বাচন আয়োজন এই তিনটি হলো তাঁর সরকারের দায়িত্ব।প্রশ্নকর্তা বলেন, কোনো দল চার্টারের সঙ্গে একমত নাও হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ আওয়ামী লীগ। সুতরাং আপনি সত্যিকারভাবে জনগণের সিদ্ধান্ত জানানোর কোনো সুযোগ দিচ্ছেন না। এটা তো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নয়। এটা ঐকমত্য নয়; এটা আজকের বাংলাদেশে কর্তৃত্ববাদী পদক্ষেপ।

জবাবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সেই বিতর্কও আছে। বিতর্ক হলো, আওয়ামী লীগ কি একটি রাজনৈতিক দল? তারা কি এভাবে তরুণদের রাস্তায় খুন করতে পারে? এভাবে গুম করতে পারে? এভাবে টাকা চুরি করতে পারে? এখনও কি তাদের রাজনৈতিক দল বলবেন? এটা কোনো জাজমেন্ট নয়; এটা বিতর্ক।ড. ইউনূস বলেন, বিষয় হলো, ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশ ছেড়ে পালালেন। জনগণ উৎসব করল। তারা এখন মুক্ত। প্রধানমন্ত্রীর বিদায়ের পর ভেবেছিলাম, ওই চ্যাপ্টার শেষ। কিন্তু যারা পালিয়ে গেছে, তারা অন্য দেশ থেকে জনগণকে উস্কানি দিচ্ছে রাস্তায় লড়াই করতে। ১০ মাস হয়ে গেল, দলটির কেউ এখনও দুঃখ প্রকাশ করেনি। বলেনি এর জন্য দায়ী নই। রাজপথে তাদের (আওয়ামী লীগ) মিছিল ও হুমকি-ধমকির কারণে আমরা নিরাপদ বোধ করছি না। হুমকি দিচ্ছে অভ্যুত্থানের নেতাদের। তাই জাতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশ ও রাজনীতির নিরাপত্তার জন্য একটি সময়ের জন্য আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে, বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত। তাদের নিষিদ্ধ করা হয়নি।বিচারের বিষয়টি কেন পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের হাতে দেওয়া হচ্ছে না? অন্তর্বর্তী সরকার কেন এটি করছে এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এই সিদ্ধান্ত আমি নিইনি। যারা আমাদের সরকারে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, তারা আমাদের এই দায়িত্ব দিয়েছে। তারা তিনটি দায়িত্ব দিয়েছে। আমরা সেটি গ্রহণ করেছি। সে জন্যই আমরা এগুলো করছি।