নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াতের আইনি লড়াইয়ের পথ খুললসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, বাড়তে পারে দিনের তাপমাত্রাবাংলাদেশ-ভারত গ্যাস পাইপলাইন হচ্ছে নাচাপ সামলে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি৩৬৯ দিন পর মাঠে ফিরলেন নেইমার
No icon

বাংলাদেশ-ভারত গ্যাস পাইপলাইন হচ্ছে না

গ্যাস সংকটের কারণে খুলনা দিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানির চেষ্টা করেছিল বাংলাদেশ। ভারতেরও আগ্রহ ছিল। সম্প্রতি সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার। কারণ হিসেবে ভারতীয় গ্যাস নিম্নমানের বলে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্পটি বিশেষ আইনে করা হয়েছে। এসব কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে না বলে জানিয়েছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার।পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, ভারত থেকে এলএনজি আনতে যে পাইপলাইন হওয়ার কথা ছিল, তা হচ্ছে না। কারণ প্রকল্পটি ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে বিশেষ আইনে নেওয়া। অন্তর্বর্তী সরকার আইনটি স্থগিত করায় এটি এখন আর হচ্ছে না। এ ছাড়া ভারতের গ্যাসে সালফারের পরিমাণ বেশি এবং হিটিং ভ্যালু কম। আমাদের গ্যাসের চাইতে নিম্নমানের। তাই বিষয়টা নিয়ে আগ্রহ নেই বাংলাদেশের।পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ভারত থেকে এলএনজি আমদানির জন্য বাংলাদেশ-ভারত পাইপলাইন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল বিগত সরকার। উদ্দেশ্য ছিল অল্প সময়ে কম পরিবহন খরচে নিরবচ্ছিন্নভাবে এলএনজি আমদানির। বর্তমানে এলএনজি আমদানি হচ্ছে কার্গো জাহাজের মাধ্যমে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পেট্রোবাংলা ২০২১ সালের ১৬ জুন ভারতীয় কোম্পানি এইচ-এনার্জির সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করে। এর আগে একই উদ্দেশ্যে ২০১৭ সালে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন লিমিটেডের সঙ্গে প্রথম এমওইউ স্বাক্ষর করেছিল পেট্রোবাংলা। বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল এনএনজি আমদানির বিকল্প সোর্স তৈরি করা। আমরা এখন জাহাজে করে এলএনজি আমদানি করে পাইপলাইনে সরবরাহ করি। ভারতের সঙ্গে পাইপলাইন থাকলে বিকল্প সোর্স তৈরি হবে।

ভারত থেকে এলএনজি আনতে মোট ৯৯ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। এরমধ্যে ভারতীয় অংশে ৪৭ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশ অংশ ৫২ কিলোমিটার। ৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন এই পাইপলাইন নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রাথমিকভাবে এই পাইপলাইনের মাধ্যমে দৈনিক ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আনার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। পরিকল্পনা ছিল এই পাইপলাইনের গ্যাস খুলনার চলমান ও ভবিষ্যৎ বিদ্যুৎকেন্দ্রসমূহে এবং দেশের পশ্চিমাঞ্চলে সরবরাহ করা। এই গ্যাসেই খুলনায় রূপসা ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র চলার কথা ছিল। কেন্দ্রটির কাজ শেষ হলেও গ্যাসের অভাবে উৎপাদনে যেতে পারছে না।এইচ-এনার্জি মহারাষ্ট্রের জয়গড় বন্দরে ভারতের প্রথম ভাসমান স্টোরেজ এবং রিগ্যাসিফিকেশন টার্মিনাল নির্মাণ করেছে। কোম্পানিটি পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় একটি এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের জন্য কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষর করেছে। ওই টার্মিনাল থেকেই বাংলাদেশে এলএনজি পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল।ভারত তাদের সমুদ্রবন্দরে অবস্থিত এলএনজি টার্মিনাল থেকে পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত যে পাইপলাইন স্থাপনের কাজ করছে সেখানে মূলত যুক্ত হতে চেয়েছে বাংলাদেশ। যার মাধ্যমে ভারত তাদের এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ করতে আগ্রহী। একই সঙ্গে এ পাইপলাইন থেকে বাংলাদেশও গ্যাস পেতে চেয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের গ্যাস পাইপলাইনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে এলএনজি আমদানির বিষয়টি পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে দুই দেশের সরকার।

ভারতের অনেকগুলো এলএনজি টার্মিনাল রয়েছে। দেশটি তাদের পোর্ট থেকে পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত এলএনজি টার্মিনাল পাইপলাইন সম্প্রসারণ করছে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন যাবৎ চেষ্টা করছে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে তাদের অন্য অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ করতে। পরে বাংলাদেশ চেষ্টা করেছে এ পাইপলাইন থেকে কিভাবে লাভবান হতে পারে। এটা আগের সরকারের পরিকল্পনায় ছিল। বর্তমানে প্রকল্পটি হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ অন্তর্বর্তী সরকার বিশেষ আইনের সব প্রকল্পই স্থগিতের উদ্যোগ নিয়েছে। সূত্র জানায়, দেশে গ্যাসের চাহিদা প্রায় চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি। এখন সরবরাহ হয় ২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদা পূরণে সরকার বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি করছে। শুধু এলএনজি আমদানিই নয়, সরকার চেষ্টা করেছিল ত্রিদেশীয় গ্যাস পাইপলাইনে (মিয়ানমার-বাংলাদেশ-ভারত) যুক্ত হতে। শেষ পর্যন্ত পারেনি। পরে ভারতের এলএনজি সরবরাহের পাইপলাইনে যুক্ত হতে চেয়েছিল।বিষয়টি নিয়ে বিগত সরকারের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় সাবেক বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছিলেন, ভারতে বেশ কয়েকটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল (এফএসআরইউ) রয়েছে। ভারত তাদের পোর্ট থেকে পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত এলএনজি পাইপলাইন সম্প্রসারণ করছে। বিগত কয়েক বছর ধরে ভারত চেষ্টা করছে পশ্চিমবঙ্গের পাইপলাইন থেকে বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তাদের অন্য অঞ্চলে গ্যাস নিতে। প্রয়োজনে বাংলাদেশকে গ্যাস দিতে রাজি আছে তারা। বাংলাদেশের গ্যাস পাইপলাইন ব্যবহার করলে ভাড়া দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছে দেশটি। বাংলাদেশ বিষয়টি নিয়ে ভাবছে।প্রসঙ্গত, ভারতের সঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতে বহুমুখী যোগাযোগ তৈরির চেষ্টা ছিল ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের। ভারত থেকে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বিদ্যুৎ আমদানি করছে। বিশেষ করে ভারতের বেসরকারি কোম্পানি আদানি গ্রুপের কাছ থেকে ১৫শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, আদানির সঙ্গে চুক্তিতে বিশেষ সুবিধাও দেওয়া হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে তেলের পাইপলাইন স্থাপনের মাধ্যমে ডিজেল আমদানি হচ্ছে। সবশেষ চেষ্টা ছিল পাইপলাইনের মাধ্যমে এলএনজি আমদানির।