বিনামূল্যের পাঠ্যবই বিলম্বে ছাপানোর কারসাজি করছে ছাপাখানা মালিকরা। এনসিটিবিকে না জানিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে সময় বাড়ানোর দাবি করেছেন তারা। যদিও পরে তা প্রত্যাহার করে ক্ষমা চেয়েছেন তারা। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে তাদের সময় বেঁধে দিয়েছে এনসিটিবি।শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ মুদ্রণশিল্প সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান জুনায়েদুল্লাহ আল মাহফুজ গত রবিবার শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর একটি চিঠি দেন। এতে বলা হয়, ২০২৫ সালের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের জন্য আগামী ২৪ মার্চ পর্যন্ত সময় প্রয়োজন। এর আগে পাঠ্যবই ছাপা শেষ করা সম্ভব নয়। একই সঙ্গে টেন্ডারের শর্তানুযায়ী ৫০ শতাংশ বই জানুয়ারিতে সরবরাহের শর্ত রহিত করা ও পুস্তক মুদ্রণের আগে আংশিক বিল পরিশোধের দাবি জানান তিনি।চিঠির বিষয়টি জানাজানি হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবির কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। মন্ত্রণালয় বিষয়টি আমলে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে এনসিটিবির চেয়ারম্যানকে বলে। পরিস্থিতি ঘোলাটে দেখে মুদ্রণ সমিতির ওই নেতা ক্ষমা চেয়ে আগের দেওয়া চিঠি প্রত্যাহার করেন।
বিষয়টিকে এনসিটিবির কর্মকর্তারা মনে করেন, বিনামূল্যের পাঠ্যবই বিলম্বে দেওয়ার জন্য ছাপাখানার মালিকরা কারসাজি করতে পারে। তবে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।এ প্রসঙ্গে গতকাল এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. একেএম রিয়াজুল হাসান বলেন, এ বিষয়ে তারা দ্রুত পদক্ষেপ নেন এবং মুদ্রণ সমিতিকে সব বই সরবরাহের জন্য ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। তিনি বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর প্রেস মালিকদের একজন সদস্য যে চিঠি দিয়েছেন, তা কোনোভাবেই বিধিসম্মত নয়। আমরা গোয়েন্দা সংস্থা ও অন্য অংশীদারদের সমন্বয়ে তদন্ত করেছি, পাঠ্যবই পৌঁছাতে চুক্তি হওয়া সময়ের বেশি লাগবে না।বেঁধে দেওয়া সময়সীমা অনুযায়ী, আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাথমিকের সব বই এবং মাধ্যমিকের বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বই ছাপা শেষ করে স্কুলে পৌঁছাতে হবে। তা ছাড়া ২০২৫ সালের ১০ জানুয়ারির মধ্যে মাধ্যমিকের আরও পাঁচটি বই এবং ২০ জানুয়ারির মধ্যে বাকি সব বই পৌঁছানোর নির্দেশনা রয়েছে।
তবে মুদ্রণশিল্প সমিতির অফিশিয়াল প্যাডে এমন আবেদন করার বিষয়টি জানতেন না বলে দাবি করেছেন সমিতির চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক। তারাও এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমা চেয়ে শিক্ষা উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়েছেন।সমিতির সভাপতি মো. রাব্বানী জাব্বার বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে লিখিত আবেদনের বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। বিষয়টির জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছাতে কাজ করছি।সমিতির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান জুনায়েদুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, আমি চিঠির জন্য ক্ষমা চাই। কয়েকজন প্রেস মালিকের দাবির প্রেক্ষিতে ওই চিঠি দিয়েছিলাম। প্রসঙ্গত, ২০২৫ সালের শিক্ষাবর্ষে বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণের জন্য প্রথম থেকে দশম শ্রেণির ৪০ কোটি ১৬ লাখের বেশি পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে।