বিগত দেড় দশকের বেশি সময় বাংলাদেশ ছিল একটি আতঙ্কের দেশ। স্বৈর শাসনের ভয়ে সব সময় ভীত-সন্ত্রস্ত থেকেছে মানুষ। সঠিক কথাটাও বলতে শতবার ভাবতে হতো। কারণ সামান্য কোনো ছুতা পেলেই তার ওপর নেমে আসতো শাস্তির খড়গ।
মন্ত্রী-এমপি তো অনেক বড় বিষয়, ক্ষমতাসীনদের পাতি নেতা পর্যন্ত জনগণকে মানুষ মনে করতো না। নেতা-নেত্রী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন তথা সর্ব ক্ষেত্রের সুবিধাবাদীরা সাধারণ জনগণের সঙ্গে পশু-পাখির মতো আচরণ করেছে।
তবে গত ৫ আগস্ট দুই হাজারের বেশি ছাত্র-জনতার প্রাণের বিনিময়ে স্বৈরাচারের পতন ঘটেছে। মানুষ মনে করছে, দেশ দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীন হয়েছে। মন খুলে কথা বলার স্বাধীনতা পেয়েছে জনগণ। অথচ আজকের দিনেও জনতাকে ভয় দেখাতে ফাঁকা গুলির ঘটনা ঘটেছে। সেটাও করেছেন পতিত স্বৈরাচারের আমলের এক এমপি।
জানা গেছে, হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে নীলফামারী-৩ (জলঢাকা) আসনের জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি রানা মোহাম্মদ সোহেল দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে মেজাজ হারান। লেন পরিবর্তন করে সামনে এগোতে গিয়ে একটি মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয় তার গাড়ি। এতে মোটরসাইকেল চালকসহ অন্যরা ক্ষেপে গেলে নিজের পিস্তল দিয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু উত্তেজিত জনতা তাকেই উত্তম-মধ্যম দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। রোববার দুপুরে উপজেলার খোয়াই সেতুর কাছে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, মনিপুরীদের রাস অনুষ্ঠান উপভোগ করতে শ্রীমঙ্গলে গিয়েছিলেন রানা মোহাম্মদ সোহেল। সেখান থেকে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন তিনি। দুপুরে চুনারুঘাট খোয়াই বেইলি সেতুর কাছে এলে যানজটে আটকে পড়েন তিনি। এ সময় রানা মোহাম্মদ সোহেল গাড়ির লেন পরিবর্তন করে সামনে এগোনোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তার গাড়ি পেছনের একটি মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এ নিয়ে দুপক্ষের বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে রানা মোহাম্মদ সোহেল পিস্তল উঁচিয়ে ফাঁকা গুলি ছোড়েন। এতে আশপাশের লোকজন ক্ষেপে যায়। তারা সোহেলকে ধরে উত্তম-মধ্যম দিয়ে পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ এলে তাকে হস্তান্তর করে।
চুনারুঘাট থানার ওসি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, রানা মোহাম্মদ সোহেলকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। পিস্তলটি জব্দ করা হয়েছে। রানা মোহাম্মদ সোহেলের বাড়ি রংপুর জেলার কেরানীপাড়া এলাকায়। তিনি ২০১৮ সালে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে মহাজোট থেকে নীলফামারী-৩ আসনে এমপি নির্বাচিত হন।