নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয়ে নতুন হিসাবনিকাশ করছে বিএনপি। টানা আড়াই মাসের আন্দোলনের ধাক্কা সামলে উঠতে ‘ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করেছে বিরোধী দলটি। আপাতত জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি ছাড়া শক্তি ক্ষয় করতে রাজি নয় ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির হাইকমান্ড। বিগত দিনে মামলা-হামলার ক্ষত কাটিয়ে উঠতে এবং নেতাকর্মীকে চাঙ্গা করতে ধারাবাহিক গণসংযোগমূলক কর্মসূচিকেই প্রাধান্য দিচ্ছে দলটি। এ উদ্যোগের মাধ্যমে তৃণমূলকে আবারও সক্রিয় করতে চাইছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। উদ্যোগ সফল করতে লিফলেট বিতরণ, গণসংযোগ ছাড়াও আসন্ন রমজানে ইফতার পার্টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।নতুন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আজ শনিবার ঢাকাসহ সারাদেশের ইউনিয়ন-ওয়ার্ড থেকে জেলা পর্যায়ে লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করবেন বিএনপি নেতাকর্মী। বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এ কর্মসূচি পালন করা হবে। এর আগেও কয়েক দফায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে একাধিক কর্মসূচি পালন করেছে দলটি।বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সমকালকে বলেন, সরকারের লুটপাটের কারণে দেশের জনগণ কষ্টে আছে। পবিত্র রমজান মাসে মানুষ একটু শান্তি এবং স্বস্তিকর পরিবেশে রোজা পালন করবে, সেহ্রি করবে, ইফতার করবে, একাগ্রতা নিয়ে ইবাদত বন্দেগি করবে এমনটিই ছিল জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু দেশে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রতিদিন বেড়েই চলছে চাল-ডাল-লবণ-তেল-চিনি-পেঁয়াজ-রসুন, তরিতরকারির দাম। এমনকি রোজাদারদের জন্য ইফতারের প্রধান অনুষঙ্গ খেজুরের দাম পর্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের এই পরিস্থিতিতে জনগণের দল হিসেবে বিএনপি সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। জনগণের দাবি আদায়ে রাজপথে আন্দোলন করছে। অনেক নির্যাতন, মামলা-হামলা, অত্যাচারের পরও তারা জনগণের পাশে রয়েছে। আসন্ন রমজানেও সাধ্যমতো জনগণের পাশে থাকবে বিএনপি।দলটির নেতারা জানান, ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচির বাইরে এবার আসন্ন রমজান মাসকে টার্গেট ধরা হয়েছে। কৌশল হিসেবে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত ইফতার-পূর্ব আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। দলের এ উদ্যোগে নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে দেশজুড়ে নেতাকর্মীর মধ্যে এক ধরনের প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে এবং এর মাধ্যমে নেতাকর্মীর মনোবল আরও দৃঢ় হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ উদ্দেশ্যে কেন্দ্রের পাশাপাশি এবার সাংগঠনিক জেলা, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে ইফতারের আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এসব ইফতার অনুষ্ঠানে কারাবন্দি ও গুম-খুন হওয়া নেতাকর্মীর পরিবার এবং কারামুক্ত নেতাকর্মীকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।তারা বলেন, এ রকম কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় রমজান মাসে নেতাকর্মীকে সংগঠিত করার পাশাপাশি জনগণকে সম্পৃক্ত করতে দেশের ইফতার পার্টিকে আরও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।কারণ হিসেবে তারা বলেন, এবারের রমজানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা অবস্থায় পড়েছেন। একদিকে দেশে গণতন্ত্র নেই, মানুষের ভোটাধিকার নেই; অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের কশাঘাতে অতিষ্ঠ জনগণকে চলমান আন্দোলনে আরও বেশি সম্পৃক্ত করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইফতার পার্টির পূর্ব আলোচনা সভায় সরকারের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাটের চিত্র তুলে ধরা হবে। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক দুরবস্থা, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপি আর নেতাদের অর্থ লোপাট, বিদেশে পাচারের চিত্র তুলে ধরে সরকারবিরোধী আগামী আন্দোলনে জনগণকে মাঠে নামার আহ্বান জানানো হবে এসব ইফতার পার্টি থেকে।