
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র হবে- এমনটা ধরে নিয়ে দেশের চলমান পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে বিএনপি। দলটির মূল লক্ষ্য দ্রুত সংস্কার ও দ্রুত নির্বাচন। এই দুই ইস্যুর প্রতি গুরুত্ব দিয়ে পথ চলছে বিএনপি। এ অবস্থায় জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর দেওয়া এক ফেসবুক পোস্ট নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এটিকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না দলটি।এ প্রসঙ্গে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা বলেন, ছাত্ররা নিজেদের সমর্থন-শক্তি নিয়ে তেমন অবগত নন। তাদের ধারণা, জুলাই-আগস্টে তাদের সাথে যারা ছিলেন, তারা এখনও তাদের সাথেই আছেন। বাস্তব অর্থে আন্দোলনের ২০ শতাংশ মানুষও ছাত্রদের সাথে নেই। ওই নেতার ধারণা, ছাত্রদের প্রতি জনসমর্থন দিন দিন কমছে। তিনি বলেন, অতএব ছাত্ররা কখন কী বলল, তা নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই, এই নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাব না।
বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, বিএনপি ও তাদের মিত্র রাজনৈতিক জোট ও দল চায় গণতন্ত্রের স্বার্থে দ্রুত সংস্কার কাজ শেষে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। এর মধ্য দিয়ে অর্থাৎ অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য ভোটে দেশে একটি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা হোক। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হলেই কেবল দেশ সঠিক পথে থাকবে।এ বিষয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সবাই ধরেই নিয়েছে ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ইতোমধ্যে অনেকে বলছে ডিসেম্বর অনেক দেরিতে। কিন্তু তারপরও ডিসেম্বর কাট অব টাইম হিসেবে ধরে নিয়েছে সবাই। সবার ধারণা, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হলে আমরা সঠিক পথে থাকব।গত বৃহস্পতিবার জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর ফেসবুক পোস্ট নিয়ে দেশের সর্বত্র ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। তার দাবি, সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে সামনে রেখে বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার চেষ্টা চলছে। এর সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জড়িয়েছেন হাসনাত আবদুল্লাহ। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির একজন নেতা বলেন, সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে স্পর্শকাতর মন্তব্য করা দেশের জন্য মঙ্গল নয়।
বিএনপি নেতারা মনে করেন, অভ্যন্তরীণ অনেক কথাই থাকে যা প্রকাশ্যে আনা যায় না। সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হচ্ছে মানুষের একটি আস্থার জায়গা। তাকে নিয়ে কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি দেওয়ার আগে বিচার-বিশ্লেষণ করা উচিত বলে মনে করে বিএনপি নেতারা। দলটির একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, ফেসবুকে ওই পোস্টের পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কিনা, এসব কিছুর পেছনে জাতীয় নির্বাচন পেছানোর কোনো বিষয় জড়িত কিনা- তা তারা খতিয়ে দেখছেন। বিএনপি জাতীয় নির্বাচনকেই গুরুত্ব দিচ্ছে, অন্য কোনো দিকে আপাতত নজর দেবে না। এই মুহূর্তে মূল হচ্ছে জাতীয় নির্বাচন। নেতারা মনে করছে, নির্বাচন হয়ে গেলে দেশের অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে। আইনশৃঙ্খরা পরিস্থিতিসহ সব কিছু স্বাভাবিক হবে।জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বাংলাদেশটা যদি স্থিতিশীল থাকে, গণতন্ত্রের পথে উত্তরণ সহজ হবে। আর দেশটা যদি শান্তিপূর্ণ থাকে তাহলে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্যও ভালো, এ দেশের সব মানুষের জন্যই শান্তি। দেশের মধ্যে একটা উত্তেজনা তৈরি হয়ে এতগুলো জীবন, এতগুলো প্রাণের বিনিময়ে পাওয়া যে একটা পরিবেশ, তা যাতে নষ্ট না হয়। এবং নিজেরা নিজেরা কোনো বিষয় নিয়ে কোনো রকমের বিবাদে জড়িয়ে না পড়ি- এই অনুরোধটা সবার কাছে থাকবে।