ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে বিএনপি। ফলে আগামী মে মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না দলটি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তবে দলের স্থায়ী কমিটির কোনো কোনো সদস্য মনে করেন দলীয় প্রতীক ছাড়া অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিত।জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। সেবার নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ঘরে-বাইরে প্রশ্ন উঠেছিল। যার কারণে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল দলটি। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের পর স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও প্রথম দিকে অংশ নিয়েছিল। পরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের নগ্ন হস্তক্ষেপর অভিযোগে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি।বিএনপি সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন সব ধরনের নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। এর পর দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় কুমিল্লায় মনিরুল হক সাক্কু, নারায়ণগঞ্জে তৈমূর আলম খন্দকারকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করাসহ অনেককে দলীয় পদপদবি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেব না- এটি দলের সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত থেকে দল সরে আসেনি। বরং অতীতের মতো যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে, তাদের বিরুদ্ধে দল আগের মতোই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।তবে দলটির কোনো কোনো নেতা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে। একজন নেতা বলেন, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে কেউ যদি প্রতীক ছাড়া নির্বাচন করে বিজয়ী হতে পারে, সেখানে বাধা দেওয়া বা সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা ঠিক হবে না। বরং এতে নেতাকর্মীদের কিছুটা হতাশা কমতে পারে। আবার যাদের নির্বাচন করার প্রবল আগ্রহ তাদের মনের বাসনাও পূরণ হবে। তখন পরাজিত হলেও কিছু বলতে পারবে না।সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন (ইসি) আগামী মে মাসে চার ধাপে দেশের ৩৪৪ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে। এর পর থেকে বিএনপি নেতারা এতে অংশ নেওয়া, না নেওয়া নিয়ে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক মতামত দিতে থাকেন। বিষয়টি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কোনো কোনো নেতা উত্থাপনের চেষ্টা করলেও আলোচনা খুব একটা আগায়নি। এ অবস্থায় গত রবিবার এবারের রমজানে দলের ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের ইফতার কর্মসূচির দিনক্ষণ চূড়ান্তকরণ বৈঠকে ভার্চুয়ালি অংশ নেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
এই বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন নেতা বলেন, বৈঠকে একজন সাংগঠনিক সম্পাদক উপজেলা নির্বাচন ইস্যুতে দলের অবস্থান কী, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাইলে ওই নেতাকে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, আমাদের কী করা উচিত? সাংগঠনিক সম্পাদক তার মতামত তুলে ধরে বলেন, আমরা দেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলনে আছি। আমাদের দাবি একটাই- তা হচ্ছে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন। এই আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী গুম, খুন, পঙ্গু হয়েছেন। নেতাকর্মীরা দিনের পর দিন কারাগারে বন্দি অবস্থায় আছেন। এ ছাড়া বিএনপির আহ্বানে গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচন দেশের মানুষ বর্জন করেছে। এ অবস্থায় ক্ষমতাসীনদের অধীনে উপজেলা নির্বাচনে গেলে জনমনে একটা ভুল বার্তা যাবে। মানুষ মনে করবে, বিএনপি তার অবস্থান থেকে সরে গিয়ে সরকারকে মেনে নিয়েছে। এ নেতার বক্তব্য শোনার পর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও ওই সাংগঠনিক সম্পাদকের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে যাবে না- দলের আগের সিদ্ধান্ত বহাল আছে। বরং যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে যাবে, তাদের বিরুদ্ধে আগের মতোই সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।