বাংলাদেশ ও ভারত আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে একমত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়। গতকাল নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে স্থানীয় সময় দুপুরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একান্ত ও প্রতিনিধি পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। দুই শীর্ষ নেতা দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক বিষয়ে আলোচনার সময় ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে নতুন পথনকশা তৈরিতে জোর দেন। বিশেষ করে গত ৫০ বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে অংশীদারত্ব নতুন স্তরে নেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে উঠে আসে বৈঠকে। নানা মাত্রায় সংযুক্তির পাশাপাশি আঞ্চলিক অগ্রগতি নিশ্চিত করবে- এমন প্রকল্পগুলো এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ও আলোচনায় গুরুত্ব পায়।দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতি দেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। তার আগে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এগুলো হলো অভিন্ন সীমান্ত নদী কুশিয়ারা থেকে ভারত ও বাংলাদেশের পানি প্রত্যাহারের বিষয়ে ভারত সরকারের জলশক্তি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক; ভারতে বাংলাদেশের রেলওয়ে কর্মীদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে ভারতের রেল মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের রেলওয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক; বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য এফওআইএস ও অন্যান্য আইটি অ্যাপ্লিকেশনের মতো আইটি
সিস্টেমে সহযোগিতার জন্য ভারতের রেল মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশের রেলওয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক। অন্য সমঝোতা স্মারকগুলো হলো ভারতে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল অফিসারদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধি কর্মসূচির বিষয়ে ভারতের ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমি এবং বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের মধ্যে সমঝোতা স্মারক; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সহযোগিতার বিষয়ে ভারতের কাউন্সিল ফর সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর) ও বাংলাদেশের কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের (বিসিএসআইআর) মধ্যে সমঝোতা স্মারক, মহাকাশ প্রযুক্তির ক্ষেত্রগুলোতে সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক এবং প্রসার ভারতী ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) মধ্যে সম্প্রচার সহযোগিতা সংক্রান্ত স্মারক।
এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যৌথভাবে বাংলাদেশের খুলনার রামপালে নির্মিত মৈত্রী বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করেন। দুই নেতা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ইউনিট-১ ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রটি স্থাপন করছে বাংলাদেশ ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড। দেড় বিলিয়ন ডলারের এ প্রকল্পটি মূলত ভারতের এনটিপিসি এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের একটি যৌথ উদ্যোগ।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিসহ ভারত ও বাংলাদেশের অন্যান্য অমীমাংসিত বিষয়গুলোর দ্রুত সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং নিকটতম প্রতিবেশী। গত ৫০ বছরে একটি শক্তিশালী অংশীদারত্ব তৈরির মাধ্যমে দুই দেশ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করছে।শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে অনেক অনিষ্পন্ন সমস্যার সমাধান ইতোমধ্যে করেছি। আমি আশা করি, তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তিসহ অন্য অনিষ্পন্ন বিষয়গুলো শিগগিরই সম্পন্ন করতে পারব। আমি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ধন্যবাদ জানাই, আজকে আমরা কুশিয়ারা ইস্যু সমাধান করেছি এবং আমি আশাবাদী, মোট যে ৫৪টি নদী আছে, সেগুলো নিয়েও। আমি জানি, যতক্ষণ পর্যন্ত মোদি আছেন, বাংলাদেশ-ভারত আমরা সব সমস্যার সমাধান করে ফেলব।