দুঃসময়ে দেশের শেষ ভরসা ছিল কৃষি। করোনার ছোবলে দেশ যখন থমকে ছিল, তখনও কৃষির চাকা ছিল সচল। নির্ভরতার সেই কৃষি এখন বড় সংকটে। গত বছরের নভেম্বরে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বৃদ্ধির ধাক্কায় দুর্ভোগে পড়েন কৃষক। এরপর গত সপ্তাহে বাড়ানো হয় সারের দাম। এবার ডিজেল-কেরোসিনের নজিরবিহীন মূল্যবৃদ্ধি মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। কৃষকের টিকে থাকাই এখন কঠিন হয়ে পড়বে বলে সংশ্নিষ্টরা মনে করছেন।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে প্রতিটি কৃষি উপকরণের দাম আকাশছোঁয়া। উৎপাদন খরচ বাড়লেও পণ্যের ন্যায্য দাম পান না কৃষক। তাঁরা বলছেন, কৃষক না বাঁচলে উৎপাদন ব্যাহত হবে। হুমকিতে পড়বে খাদ্য নিরাপত্তা। ফলে সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কৃষকের স্বার্থে ভর্তুকি বাড়াতেই হবে।তবে সরকার বলছে, তারা কৃষকের পাশে আছে। বিনামূল্যে বীজসহ নানা উপকরণ দেওয়া হচ্ছে। ভর্তুকি বাড়ানো হয়েছে। দাম বৃদ্ধির প্রভাব কৃষক পর্যায়ে পড়বে না। কারণ উৎপাদন খরচ বাড়লেও কৃষক বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে পারছেন।
আমন নিয়ে সংকট: বর্ষাকাল ও আমন ধানের চারা লাগানোর মৌসুম প্রায় শেষ। অথচ কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির দেখা নেই। শুকিয়ে গেছে মাঠ-ঘাট। এর মধ্যে যোগ হয়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। বাধ্য হয়ে কৃষক চালু করেছেন ডিজেলচালিত পাম্প। কিন্তু সেই ডিজেলের দাম এক লাফে বাড়ল ৩৪ টাকা। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক। এর আগে গত সপ্তাহে সারের দাম ৬ টাকা বাড়িয়েছে সরকার।বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক এম আসাদুজ্জামান বলেন, সরকারি হিসাবে আর আট দিনের মধ্যে ধান রোপণ করতে হবে। শুধু রোপণ নয়, ধানের চারা বেড়ে ওঠার সময় সেপ্টেম্বর নাগাদও জমিতে পানি থাকতে হবে। সময়মতো বৃষ্টি না হলে এই ধানে ঝুঁকি থাকে।এ সরকার সবসময় কৃষকের পাশে ছিল। ভবিষ্যতেও থাকবে। সরকার বিনামূল্যে বীজ ও কীটনাশকসহ নানা কৃষি উপকরণ দিচ্ছে। কৃষিযন্ত্রের ওপর ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। সারের ওপর গত অর্থবছরের তুলনায় দ্বিগুণ ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, ডিজেলের দাম বাড়ায় কৃষিতে কিছুটা প্রভাব পড়বে। তবে কী ধরনের প্রভাব পড়বে, তা পর্যবেক্ষণ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।