ঢাকার সড়ক রয়েছে আয়তনের ৯ শতাংশ। থাকার কথা ২৫ শতাংশ। এ অবস্থায় ছোট গাড়ির পরিবর্তে গণপরিবহন বাড়ানো দরকার। কিন্তু ঘটছে উল্টোটা। কমছে বাস-মিনিবাস, বাড়ছে কার-মোটরসাইকেল। প্রতিদিন দেশের সড়কে নতুন করে নামছে এক হাজার ৪০৯টি মোটরসাইকেল, ৫০টি প্রাইভেটকার আর ১০টি করে বাস। প্রাইভেটকারের আধিক্য ঢাকার রাস্তায় যানজটের অন্যতম কারণ। ফলে সামনে রাজধানীর যানজট সমস্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা দেখছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, প্রাইভেট গাড়ি নিবন্ধন দেওয়ার ক্ষেত্রে সড়কের সীমাবদ্ধতা ও পরিমাণ বিবেচনা করা উচিত।সংশ্লিষ্টরা জানান, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসছে গ্রাহকদের গাড়ি কেনার ঋণ দিতে। তা ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে গাড়ি কেনা ঝোঁক বেড়েছে। এখন উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাও গাড়ি বাবদ রক্ষণাবেক্ষণ খরচ পান। সহজ শর্তে তাদের ঋণ দিচ্ছে সরকার। আগে অবসরে যাওয়ার আগে সরকারি কর্মকর্তারা গাড়ি কেনার চিন্তা করতেন। তাদের একটা অংশ সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন অফিসের কাজে; আর পারিবারিক কাজে ব্যবহার করেন ব্যক্তিগত গাড়ি।
এক দশক আগেও দেশে নির্দিষ্ট কয়েকটি এলাকায় রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বিক্রয়কেন্দ্র বা শোরুম ছিল। এসব শোরুমের বেশিরভাগই ছিল নয়াপল্টন-বিজয়নগর এলাকায়। এখন এসব শোরুমের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। শোরুমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও এখন গাড়ি কিনতে ঋণ দিচ্ছে। এর ফলে বিক্রি বাড়ছে গাড়ির। আবার গণপরিবহনের সংকটও ব্যক্তিগত গাড়ি বৃদ্ধির জন্য দায়ী।বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ২০ ধরনের যানবাহনের হিসাব সংরক্ষণ করে। এর মধ্যে কার, জিপ (স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল-এসইউভি) ও মাইক্রোবাসকে ব্যক্তিগত ব্যবহারের গাড়ি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ ছাড়া বাস-ট্রাকসহ অন্য যানবাহনগুলো বাণিজ্যিক যানের আওতাভুক্ত। সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও গাড়ি ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, নিবন্ধন নেওয়া ব্যক্তিগত গাড়ির মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশই রিকন্ডিশন্ড বা পুরনো (জাপানে একবার ব্যবহৃত)। তবে বিআরটিএর কর্মকর্তারা মনে করেন, এই সংখ্যা ৭৫ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গণপরিবহনের ঘাটতিতে মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনও গাড়ি কেনার ইচ্ছা পোষণ করেন। সামাজিক মর্যাদা বাড়াতেও গাড়িকে বেছে নেন। একই পরিবারে একাধিক গাড়ির ব্যবহার বাড়ছে। যদিও সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছিল, গাড়ি কেনায় শর্ত দেওয়া হবে। একই পরিবারে একের অধিক গাড়ি নয়, এমন আলোচনার পর একটি অংশ বলতে থাকেন- পরিবারের সদস্যদের অবস্থানের সংজ্ঞা নিয়ে ব্যাখ্যা দরকার। যারা পৃথকভাবে থাকেন, তাদের ব্যাপারে কী হবে, এমন কথাবার্তা চালিয়ে উদ্যোগটি চাপা পড়ে। কার পার্কিংয়ের ব্যবস্থা ও আয়ের উৎসের শর্ত দেওয়ার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা বলে আসছিলেন। ব্যক্তিগত গাড়ির নিবন্ধন কমানোর সিদ্ধান্তও আসছে না।বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন,ব্যক্তিগত গাড়ি নিবন্ধনে এখন পর্যন্ত কোনো সিলিং নেই। এগুলোর ব্যবহার কমাতে হবে। তবে তার আগে সড়কে যান চলাচলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করাও দরকার। অবশ্যই সমন্বিত গণপরিবহনে জোর দিতে হবে।