ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ঘটনায় প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে দেখা গেছে। চলতি বছরের ২৪ মার্চ মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় কলেজছাত্রীও গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তদন্ত-সংশ্নিষ্টদের তথ্যমতে, এ হত্যাকাণ্ডে একাধিক বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহূত হয়।এর আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার খাগরিয়া, নলুয়া, বাজালিয়া, সোনাকানিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় অস্ত্রের মহড়া চলে। গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। এতে প্রাণ হারান দুজন। গত বছরের ২২ নভেম্বর কুমিল্লায় ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সোহেল ও তাঁর সহযোগী হরিপদকে এলোপাতাড়ি গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।সর্বশেষ গত সপ্তাহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও হাইকোর্ট এলাকায় ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের মধ্যে সংঘর্ষের সময় গুলির শব্দ শোনা গেছে। দিন দিন অস্ত্রবাজরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। পরিসংখ্যানও বলছে, আগের তুলনায় অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। তাই অস্ত্র জব্দ এবং অস্ত্রবাজ গ্রেপ্তারের হার ঊর্ধ্বমুখী। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে সারাদেশ থেকে নানা ধরনের ৮৫৮টি অস্ত্র উদ্ধার করেছে র;্যাব। এই হিসাবে প্রতি মাসে গড়ে ২১৪টির বেশি অস্ত্র জব্দ হচ্ছে। ২০২১ সালে অস্ত্র উদ্ধার হয় ৮৪৬টি। এই হিসাবে মাসে গড়ে ৭০টির মতো অস্ত্র উদ্ধার হয়। গত বছরের ১২ মাসে যে অস্ত্র জব্দ হয়, তার তুলনায় চলতি বছরের প্রথম চার মাসে ১২টি অস্ত্র বেশি জব্দ হয়েছে।
গত বছর অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয় ৮৫৩ জন। এই সময় অভিযান হয়েছে ৬৯৮টি, আর মামলা ৫৬১টি। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে অস্ত্র-সংক্রান্ত ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৬৭ জনকে। এ সময়ে অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান হয়েছে ৩৮৯টি। ২০২০ সালে সারাদেশে অস্ত্র উদ্ধার হয় ৬৯৮টি। এই সময় ৪০৯টি অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয় ৫৪৪ জনকে। মামলা করা হয় ৩৯০টি।আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা জানান, অস্ত্র ও মাদকের সব চালান ধরা সম্ভব হয় না। সাধারণত প্রতি পাঁচটি চালানের একটি ধরা পড়ে। বাকিরা ফাঁকফোকর গলিয়ে পালিয়ে যায়।টেকনাফে মাদক ও মানব পাচারকারীদের কেউ কেউ গোপনে অস্ত্র কারবারে জড়াচ্ছে। অনেক রোহিঙ্গা মাদকের পাশাপাশি অস্ত্র কারবারে জড়ানোর চেষ্টা করছে। আবার রাজনৈতিক আধিপত্য বজায় রাখতে অনেকে অবৈধ অস্ত্র তার হেফাজতে রাখছে। গত বছর কক্সবাজারের ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ১৩টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ২১৪টি দেশি অস্ত্র উদ্ধার করে।
র;্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় চলতি বছর দেশি অস্ত্রের কারখানার খোঁজ আমরা পেয়েছি। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশে এই ধরনের কারখানায় অভিযানও চালানো হয়। এ ছাড়া মাদক কারবারিদের কেউ কেউ তাদের কারবার নির্বিঘ্ন করতে অস্ত্র রাখে। এমনকি নির্বাচন ঘিরে যেখানে অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে, সেখানে অভিযান চালানো হয়। এই কারণে চলতি বছর অস্ত্র উদ্ধারের সংখ্যা বেশি।সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি ও ছিনতাই ছাড়াও অতি তুচ্ছ ঘটনায় ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। এসব ঘটনায় ব্যবহূত অবৈধ অস্ত্রের বেশিরভাগ আসছে পার্শ্ববর্তী দুটি দেশ থেকে অবৈধ পথে। এর মধ্যে একটি দেশ থেকে আসছে ক্ষুদ্রাস্ত্র এবং অপর একটি দেশের সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে ভারী ও বড় অস্ত্র। এ ছাড়া অভিযোগ আছে, দেশে আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রির বৈধ কিছু দোকানে বিশেষ কৌশলে নম্বর তুলে অপরাধীদের কাছে বেশি দামে ক্ষুদ্রাস্ত্র বিক্রি করা হয়।