চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম দিনে ২ উইকেট হারিয়ে ৩০৭ রান সংগ্রহ করল দক্ষিণ আফ্রিকানিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াতের আইনি লড়াইয়ের পথ খুললসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, বাড়তে পারে দিনের তাপমাত্রাবাংলাদেশ-ভারত গ্যাস পাইপলাইন হচ্ছে নাচাপ সামলে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি
No icon

আদানির বিদ্যুতে কতটুকু লাভ

ভারতের আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনা বাংলাদেশের জন্য লাভজনক, না অধিক ব্যয়ের ফাঁদে জড়িয়ে পড়বে- তা নিয়ে ওয়াকিবহাল মহলে বিতর্ক চলছে। ঝাড়খন্ডে গ্রুপের প্রায় সম্পন্ন ১৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হতে পারে। ২৫ বছরের মেয়াদে এই বিদ্যুৎ কিনতে সম্ভাব্য ব্যয় হবে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জই ৯৬ হাজার কোটি টাকা। ক্যাপাসিটি চার্জ হচ্ছে সর্বোচ্চ পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহারের সময়ে গ্রিডে পর্যাপ্ত শক্তি নিশ্চিত রাখার জন্য দেয় মাশুল।অসম চুক্তি, অযাচিত ব্যয়, বেশি দাম এবং সমঝোতায় অদক্ষতার কারণে এই বিদ্যুৎ কেনা বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন খাত সংশ্নিষ্টরা। তারা বলছেন, লোকসানের ভারে জর্জরিত বিদ্যুৎ খাতকে আরও ধরাশায়ী করে দেবে আদানির ব্যয়বহুল বিদ্যুৎ। আদানির বিদ্যুতের দাম দেশীয় কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রের বিদ্যুৎ বা ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের চেয়ে বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে।সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে আদানির বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হবে। ফলে এ বিদ্যুৎ যখন আসবে তখন ব্যয়বহুল তেলচালিত কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ কেনা কমবে। এতে ভর্তুকিও হ্রাস পাবে।


ভারতের ঝাড়খন্ডের গোড্ডা জেলায় ১৬০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করবে আদানি গ্রুপ। সেখান থেকে ১৪৭ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে বগুড়া পর্যন্ত এই বিদ্যুৎ আনা হবে। এর মধ্যে ৯০ কিলোমিটার সঞ্চালন হচ্ছে ভারতে। আর বাংলাদেশে বসছে ১৪৫ কিলোমিটার লাইন।লাইন স্থাপনের কাজ এ বছরের অক্টোবর বা নভেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ এরই মধ্যে ৮৪ শতাংশ শেষ হয়েছে। আগস্টের মধ্যে উৎপাদনে যেতে পারে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র।৮৪.৬ শতাংশ প্লান্ট ফ্যাক্টরে এই কেন্দ্র থেকে ১ হাজার ৩৪৪ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। বিদ্যুৎ জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ আইনে সমঝোতার মাধ্যমে এই বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছে। ২০১৫ সালের ১১ আগস্ট আদানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবর আদানির সঙ্গে ক্রয়চুক্তি সই হয়।জানতে চাইলে বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে আদানির বিদ্যুৎ সস্তা। ফলে এই বিদ্যুৎ আমদানি দেশের জন্য লাভজনক। আদানির বিদ্যুৎ এলে তেলভিত্তিক বিদ্যুতের উৎপাদন কমবে। পাশাপাশি গ্যাস সংকটে থাকা বিদ্যুতের যে ঘাটতি হয় তা থেকেও পরিত্রাণ মিলবে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের বিদ্যুৎ ঘাটতি ও লো-ভোল্টেজ সমস্যার সমাধান মিলবে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. ম তামিম বিদ্যুৎ সচিবের বক্তব্যের সঙ্গে ঐকমত্য প্রকাশ করে বলেন, বর্তমানে আমদানি করা গ্যাসে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে খরচ হচ্ছে, আদানির বিদ্যুৎ তার চেয়ে সাশ্রয়ী। আর কোনো রকম বিনিয়োগ ছাড়া বাংলাদেশ এই বিদ্যুৎ পাচ্ছে, যা ইতিবাচক।তবে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, এমনিতেই অবিবেচনাপ্রসূতভাবে দলীয় ব্যবসায়ীদের বিদ্যুৎকেন্দ্র দিয়ে বিদ্যুৎ খাতকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চাহিদা না থাকায় প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা মাশুল দিচ্ছে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে। এর মধ্যে আদানির বিদ্যুতের কোনো প্রয়োজন ছিল না। তিনি এই চুক্তি বাতিলের দাবি জানান।