বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি আগামী সোমবার। এ উপলক্ষে ওয়াশিংটনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। সেখানে অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার ফাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন তিনি।সোমবার দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই বৈঠকের আলোচনায় গুরুত্ব পাবে তিনটি বিষয়। এগুলো হচ্ছে- র;্যাবের সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ক্ষেত্রে আরও বেশি সুবিধা নিশ্চিত করা এবং বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে যুক্তরাষ্ট্রের ফিরিয়ে দেওয়া। এর বাইরে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার আরও কিছু বিষয় আলোচনায় আসবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। অন্যদিকে সংশ্নিষ্ট কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে বাংলাদেশের অবস্থান এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়ে জোর দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া দুটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি আকসা ও জিসোমিয়ার প্রসঙ্গও বৈঠকে আলোচনায় আসতে পারে।ওই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আজ শনিবার ওয়াশিংটন রওনা হচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বৈঠকের আলোচনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৈঠকে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও সহযোগিতার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ওই আমন্ত্রণেই দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের বিষয়েও বলেন তিনি।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর উদ্ভূত বিশ্ব পরিস্থিতি এবং গত বছরের শেষের দিকে র;্যাবের সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ হবে। আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র কী বলতে চায়, সেটা শুনব। আগে তাদের কথা শুনতে চাই।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত ২০ মার্চ ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধিসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা-সংক্রান্ত আকসা ও জিসোমিয়া নামের দুটি চুক্তি সই করার বিষয়টি ঢাকায় অনুষ্ঠিত অংশীদারিত্ব বৈঠকে তোলেন ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড। আকসা হচ্ছে- অ্যাকুজিশান অ্যান্ড ক্রস-সার্ভিসিং এগ্রিমেন্ট। এর অধীনে মার্কিন বাহিনী খাদ্য, জ্বালানি, গোলাবারুদ ও সরঞ্জামাদি বিনিময় করে থাকে। আর জিসোমিয়া হচ্ছে- জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন এগ্রিমেন্ট। এই চুক্তির অধীনে সামরিক গোয়েন্দা তথ্যের বিনিময় করে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়গুলো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওয়াশিংটন বৈঠকেও উঠতে পারে।এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, আকসা কিংবা জিসোমিয়া চুক্তি করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ১৯৩টি দেশের কাছে আরও আগেই প্রস্তাব পাঠিয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশও আছে। তবে এ দুটি চুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেয়নি। এটা ওয়াশিংটন বৈঠকে আলোচনা হবে কিনা সেটাও বৈঠকের আগে বলা যাচ্ছে না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আলোচনায় প্রাধান্য পাওয়া ওই তিনটি বিষয়ই এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে কোনো পর্যায়ের আলাপে প্রাধান্য পাচ্ছে। সর্বশেষ ঢাকা অংশীদারিত্ব সম্মেলনেও বাংলাদেশ এ তিনটি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে আলোচনায় তোলে। ওই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি জটিল ও সময়সাপেক্ষ বলে উল্লেখ করেছিলেন। এ ছাড়া যতবারই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের আরও বেশি সুবিধার কথা বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ততবারই এটা বাজার পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল বলে উল্লেখ করা হয়।অন্য একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ইউক্রেন পরিস্থিতির বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলকে আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। সে বিবেচনায় ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে বাংলাদেশের সঙ্গে সক্রিয় সহযোগিতার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তোলা হতে পারে। এ বিষয়টি নিয়ে এর আগেও একাধিক বৈঠকে বাংলাদেশ স্পষ্ট করেই জানিয়েছে, বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ কখনোই সামরিক কৌশলগত বিষয়ে কোনো জোটে অংশ নেয় না। সূত্র আরও জানায়, আকসা ও জিসোমিয়া চুক্তির ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র জোর দিতে পারে। তবে এ বিষয়ে এখনই আলোচনায় কোনো ফল আসবে বলে মনে হয় না। সার্বিকভাবে এ দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের মধ্য দিয়ে আগামীতে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেওয়ার আলোচনায় অগ্রগতি হবে- এটা আশা করা যায়।