চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম দিনে ২ উইকেট হারিয়ে ৩০৭ রান সংগ্রহ করল দক্ষিণ আফ্রিকানিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াতের আইনি লড়াইয়ের পথ খুললসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, বাড়তে পারে দিনের তাপমাত্রাবাংলাদেশ-ভারত গ্যাস পাইপলাইন হচ্ছে নাচাপ সামলে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি
No icon

সামান্যের ভয়ে বিশাল ঝুঁকি

যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজকে কেন ইউক্রেনে পাঠানো হলো, সেই প্রশ্ন বারবারই ঘুরেফিরে আসছে। বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) দাবি করছে, অনুমতি না দিলে তাদের বড় অঙ্কের জরিমানা গুনতে হতো। টাকার অঙ্কে যা ছয় কোটি টাকার মতো। এখন আরেকটি প্রশ্ন সামনে এসে দাঁড়িয়েছে- ছয় কোটি টাকার ভয়ে ২০৪ কোটি টাকার জাহাজকে ঝুঁকিতে ফেলা হলো? বিএসসি জরিমানার বিষয়টি সামনে আনলেও আইন বলছে ভিন্ন কথা। আর রাশিয়ার রকেটের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলার সমৃদ্ধি কবে ফিরিয়ে আনা যাবে, তা জানে না কেউ।বাল্টিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম কাউন্সিল (বিআইএমসিও) ওয়ার রিস্ক ক্লজ ফর টাইম চার্টারিংয়ের (কনওয়ারটাইম ২০১৩) বি ধারায় বলা আছে- যুদ্ধের ঝুঁকি আছে- এমন কোনো স্থানে জাহাজের মালিক বা মাস্টার যুক্তিসংগত কারণে যেতে বাধ্য নন। তাই প্রশ্ন এসেই যায়, তাহলে কেন যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে ইউক্রেনে বাংলার সমৃদ্ধিকে পাঠালো বিএসসি। আবার গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জয়েন্ট ওয়ার কমিটি অলভিয়া বন্দর সংলগ্ন এলাকাকে যুদ্ধকবলিত অঞ্চল ঘোষণা করেছিল। তাহলে ২২ ফেব্রুয়ারি ২৯ নাবিককে কেন ঝুঁকি নিয়ে ওই অঞ্চলে প্রবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। শিপিং করপোরেশন বলছে, যুদ্ধকালীন ভেনেজুয়েলায় যেতে এমন আপত্তি করায় তাদের থেকে ছয় কোটি টাকা দাবি করেছিল চার্টারার প্রতিষ্ঠান। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দাবি করা এই টাকা পরিশোধ করতে হয়নি বিএসসিকে। যুদ্ধ ঝুঁকিস্থানে যেতে বাধ্য না হওয়ায় এখনও বিষয়টি ঝুলে আছে।

এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজটি ২০৪ কোটি টাকায় কেনা হয়। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর বিএসসিকে জাহাজটি বুঝিয়ে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি)। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে রকেট হামলায় গত বুধবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলার সমৃদ্ধি। গোলার আঘাতে নিহত হয়েছেন জাহাজে থাকা থার্ড ইঞ্জিনিয়ার প্রকৌশলী হাদিসুর রহমান। জাহাজটিতে আগুনও ধরে যায়। সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিএসসির অদূরদর্শিতার কারণে এখন বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়েছে ২০৪ কোটি টাকার এই সম্পদ। কখন যুদ্ধ শেষ হবে, কখন চ্যানেল নিরাপদ হবে; তার ওপর নির্ভর করছে এ জাহাজের ভবিষ্যৎ। দীর্ঘদিন জাহাজটি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকলে এটির আর্থিক মূল্য কমবে বলে মনে করছে জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত যা তথ্য জেনেছি, জাহাজটির ইউক্রেনে যাওয়া এড়ানো যেত। এখানে বিএসসির গাফিলতি ছিল বলেই আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে। জাহাজ পরিচালনায় বিএসসির সার্বিক অব্যবস্থাপনার কারণে আমাদের আজ এই মৃত্যু ও নাবিকদের দুর্দশা দেখতে হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় মূল্যবান সম্পত্তি বাংলার সমৃদ্ধির চরম ক্ষতি হয়েছে। এই মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতির দায় কে নেবে?