
আসন্ন রমজানে বাজারে যেন কোনো ধরনের অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় সেজন্য প্রতি জেলায় থাকা বাজার মনিটরিং-সংক্রান্ত টাস্কফোর্সগুলোকে কার্যক্রম জোরদার করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে অসাধু চক্র এবং অবৈধ মজুতদারদের ধরতে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। এজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অধীনে থাকা সব মনিটরিং টিমকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কার্যকর ভূমিকা রাখার নির্দেশনা দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। এ রকম একটি নির্দেশনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকদের বরাবরে পাঠিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। এতে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কয়েক দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার পাঠানো ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে- অবৈধ মজুতদার ঠেকাতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান জোরদার করতে হবে। প্রতি জেলায় ডিসিদের নেতৃত্বে থাকা বাজার মনিটরিং সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের অভিযানও জোরদার করতে বলা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। পণ্যের সরবরাহ চেইন স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দৈনন্দিন প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। টিসিবির মাধ্যমে যে বাজার মূল্য পরিস্থিতি মনিটরিং করা হয় সেটার সঙ্গে টাস্কফোর্সগুলোতে সমন্বয় করতে বলা হয়েছে। কোনো অসাধু চক্র অবৈধভাবে পণ্য মজুত করছে কি না, কারসাজি করে কৃত্রিম সংকট তৈরি কিংবা দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে কি না সে বিষয়েও কঠোর মনিটরিং করতে বলা হয়েছে। অবৈধ মজুত কিংবা কৃত্রিম সংকট তৈরির প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি বিধিতে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব রমজান।
আগের সরকারের ধারাবাহিকতায় অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও ঊর্ধ্বগতি রয়েছে মূল্যস্ফীতির। এতে নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তের কষ্ট বাড়ছে। খেয়েপরে বেঁচে থাকতে প্রতিনিয়ত লড়াই করছেন তারা। সকাল-বিকালের নাশতা থেকে শুরু করে তিন বেলার খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছেই। কিন্তু বাড়েনি মানুষের আয়। এতে সংসার সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন সব শ্রেণির মানুষ। এর মধ্যে আসছে পবিত্র রমজান। ইতোমধ্যে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে রোজার পাঁচ পণ্য- ছোলা, ভোজ্যতেল, পিঁয়াজ, মসুর ডাল, খেজুরের দাম আগ থেকেই বাড়ানো হচ্ছে। এতে রোজা ঘিরে ভোক্তাদের দুশ্চিন্তা আরও বেড়েছে। এজন্য রমজানে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে বাজার তদারকির জন্য এসব কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। এ পরিস্থিতিতে অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি থেকে কয়েকটি নিত্যপণ্যের শুল্ক-কর কমানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে চাল, ডিম, সয়াবিন তেল, পাম তেল, চিনি, পিঁয়াজ, আলু ও খেজুর। অন্যদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাজার মনিটরিং জোরদার করেছে। এলক্ষ্যে প্রতি জেলায় ১০ সদস্যবিশিষ্ট টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।
এদিকে পণ্য আমদানির ট্যারিফ হ্রাস, ঋণের সুদ বাড়ানোসহ কয়েকটি উদ্যোগ নেওয়ার পরও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুফল মিলছে না। গড় মূল্যস্ফীতি এখনো ১০ শতাংশের ওপরেই রয়েছে। এই কমিটির কার;্যাবলি সম্পর্কে বলা হয়েছে, টাস্কফোর্স নিয়মিত বিভিন্ন বাজার, আড়ত, গুদাম, কোল্ড স্টোরেজ ও সরবরাহ ব্যবস্থার অন্যান্য স্থান সরেজমিনে পরিদর্শন করবে এবং পণ্যের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার বিষয়টি তদারকি করবে। টাস্কফোর্স উৎপাদন, পাইকারি ও ভোক্তা পর্যায়ে যাতে দামের পার্থক্য ন্যূনতম থাকে তা নিশ্চিত করবে এবং অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করবে। টাস্কফোর্স প্রতিদিনের মনিটরিং শেষে একটি প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেলে নির্ধারিত নম্বর ও ই-মেইলে এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে পাঠাবে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বিভিন্ন জেলা থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদন সংকলন ও পর্যালোচনা করে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠাবে। টাস্কফোর্স প্রয়োজনে সদস্য সংখ্যা বাড়াতে পারবে।