রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ২০২৪ সালে ব্যাকিংখাতও ছিল বেশ ঘটনাবহুল। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের চিত্র পুরোপুরি পাল্টে গেছে।আওয়ামী লীগের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে দেশের আর্থিক খাতে সুশাসন ছিল অনুপস্থিত। ভেঙে পড়ে ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা, ঋণের নামে লুটপাট করা হয় হাজার হাজার কোটি টাকা। সরকার পতনের পর প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে ব্যাংকিং খাতের নানা অনিয়মের চিত্র।এক বছর ধরে দেশে ডলার সংকট ও তারল্য সংকট বেড়েছে। ব্যাংকগুলো খারাপ অবস্থায় পড়েছে, নতুন ঋণ অনুমোদনেও বাধা ছিল, খেলাপি ঋণ বেড়েছে অনেক। বিপরীতে তাগাদা দেওয়ার পরেও তা আদায় হচ্ছে না। বৈদেশিক মুদ্রার সংকট বেড়েছে। রিজার্ভ কমে গেছে। এলসি খোলা ও নিষ্পত্তিতে উভয় সংকটে পড়তে হয়েছে ব্যাংক ও গ্রাহকদের।
তারল্য ঘাটতি
দেশের নয়টি ব্যাংক গ্রাহকদের চাহিদামতো টাকা দিতে পারছে না। কোনো কোনো ব্যাংক গ্রাহকদের সারাদিন বসিয়ে রেখে টাকা না দিয়ে পরের দিন যেতে বলছে। এসব ব্যাংকের চলতি হিসাবের ঘাটতি ১৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এস আলমের দখলে থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের। এ ব্যাংকটির ঘাটতির পরিমাণ সাত হাজার ২৬৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তিন হাজার ৩৯৪ কোটি টাকার ঘাটতি রয়েছে স্যোশাল ইসলামী ব্যাংকের।বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছিলেন, টাকা ছাপিয়ে ওই সব ব্যাংককে দেওয়া হবে না। যেসব ব্যাংকে উদ্বৃত্ত তারল্য আছে তাদের দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ঋণ দিতে বলা হয়েছে। আর এর গ্যারান্টার হবে বাংলাদেশ ব্যাংক।তবে তাতে তেমন সাড়া না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে টাকা ছাপিয়ে টাকা ধার দিতে হয়েছে।
টাকা ছাপিয়ে ঋণ
আগের সরকারের মতো টাকা ছাপিয়ে সরকারকে বা কোনো ব্যাংককে অর্থ দেওয়া হবে না- গত আগস্টেই এমন মন্তব্য করেছিলেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তবে এমন মন্তব্যের তিন মাসের মধ্যেই সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। টাকা ছাপিয়ে ছয়টি দুর্বল ব্যাংককে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার কথা জানান গভর্নর নিজেই।
গভর্নর জানান, এসব ব্যাংকের গ্রাহকরা টাকা তুলতে পারবেন।
যদিও সমস্যা এখনও কিছুটা রয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, একদিকে যেমন টাকা ছাপানো হচ্ছে, তেমনি সেই টাকা বাজার থেকে তুলেও নেওয়া হবে বন্ড ছাড়ার মাধ্যমে। এর ফলে মূল্যস্ফীতিকে ঠিক রাখার প্রচেষ্টা থেকে পিছিয়ে যাচ্ছেন না বলেও জানান গভর্নর।
গভর্নরকে বয়কট: আর্থিক খাতের বিরল ঘটনা
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ও অবাধ তথ্য প্রবাহ প্রকাশে বাধার প্রতিবাদে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের বক্তব্য বয়কট করেছিলেন সাংবাদিকরা। যা দেশের আর্থিক খাতের জন্য বিরল ঘটনা। রীতি অনুযায়ী বাজেট ঘোষণার পরের দিন সংবাদ সম্মেলন করেন অর্থমন্ত্রী। সাধারণত বাজেটোত্তর এ সংবাদ সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের। ব্যাংকখাত সংশ্লিষ্ট, মূল্যস্ফীতিসহ অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়ে থাকেন তিনি। তবে এবার হয়েছে তার ব্যতিক্রম। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকরা গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারকে বয়কটের ঘোষণা দেন।