অনুপ্রবেশ লাখ ছাড়িয়েছে!সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না সাংবাদিকরা, বেসরকারি পাসও বাতিলহজ কোটা এবারও পূরণ হচ্ছে নাসংস্কার ও নির্বাচনের প্রস্তুতি একই সঙ্গে: ড. ইউনূসদেশসেরা ব্র্যান্ডসমূহকে পুরস্কৃত করল বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম
No icon

সংস্কার ও নির্বাচনের প্রস্তুতি একই সঙ্গে: ড. ইউনূস

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গণহত্যার বিচার, চলমান সংস্কার ও আগামী নির্বাচনের পথ খুঁজতে শুরু হয়েছে দু দিনের জাতীয় সংলাপ। ২০টি রাজনৈতিক দল ও জোট, বিশিষ্টজন, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে অংশ নিচ্ছেন। প্রথম দিনে বিস্তৃত পরিসরে উঠে এসেছে নানা প্রসঙ্গ, সূক্ষ্ম বিতর্ক।ঐক্যবিহীন সংস্কার কিংবা সংস্কারবিহীন নির্বাচন দেশকে এগিয়ে নিতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, সংস্কার বিষয়ে আমাদের মধ্যে ঐকমত্য প্রয়োজন। ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন এই তিন লক্ষ্যের কোনোটিকে ছাড়া কোনোটি সফল হতে পারবে না। সংস্কার ও নির্বাচনের প্রস্তুতি একই সঙ্গে চলতে থাকবে।গতকাল শুক্রবার রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত জাতীয় সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন স্লোগানে দু দিনব্যাপী এই জাতীয় সংলাপের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভার্চুয়ালি যোগ দেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, তরুণরা সংখ্যায় বেশি। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা আগ্রহী। নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে তার মতামত নেওয়ার জন্য আমি মনে করি, ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারিত হওয়া উচিত।নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজ মূলত নির্বাচন কমিশনের উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, নাগরিকদের নির্বাচনের তারিখ না পাওয়া পর্যন্ত এই প্রক্রিয়ায় সময় দিতে হয় না। কিন্তু সংস্কারের কাজে সব নাগরিককে অংশগ্রহণ করতে হবে। যারা ভোটার তারা তো অংশগ্রহণ করবেনই, তার সঙ্গে যারা ভবিষ্যতে ভোটার হবেন, তারাও সর্বাত্মকভাবে সংস্কারের কাজে নিজেদের নিয়োজিত করুন।

তিনি বলেন, সংস্কারের কাজটা নাগরিকদের জন্য সহজ করতে আমরা ১৫টি সংস্কার কমিশন গঠন করে দিয়েছিলাম। তাদের প্রতিবেদন আমরা জানুয়ারি মাসে পেয়ে যাব। প্রত্যেক সংস্কার কমিশনের দায়িত্ব হলো, প্রধান বিকল্পগুলো চিহ্নিত করে তার মধ ;্য থেকে একটি বিকল্পকে জাতির জন্য সুপারিশ করা। যার যার ক্ষেত্রে সংস্কারের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ কীভাবে রচিত হবে, তা বিভিন্ন পক্ষের মতামত নিয়ে সুপারিশমালা তৈরি করে দেওয়া, নাগরিকদের পক্ষে মতামত স্থির করা সহজ করে দেওয়া।কমিশনের প্রতিবেদনে সুপারিশ করলেই তা মেনে নিতে হবে এমন কোনো কথা নেই জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এ জন্য সর্বশেষ পর্যায়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়েছে। সব ক টি কমিশন মিলে আমাদের সামনে বহু সুপারিশ তুলে ধরবে। আমরা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছি, যার যাই মতামত হোক না কেন, আমরা দ্রুত একটা ঐকমত;্য প্রতিষ্ঠিত করে সংস্কারের কাজগুলো করে ফেলতে চাই। নির্বাচনের পথে যেন এগিয়ে যেতে পারি, সেই ব্যবস্থা করতে চাই।ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারিত হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, নির্বাচন সংস্কার কমিশন কী সুপারিশ করবে, তা আমার জানা নেই। কিন্তু দেশের বেশির ভাগ মানুষ যদি কমিশনের সুপারিশ করা বয়স পছন্দ করে, ঐকমত;্যে পৌঁছার জন্য আমি তা মেনে নেব।ড. ইউনূস বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের রূপান্তর পর্বে প্রবেশ করার অধিকার অর্জন করেছি। এই রূপান্তর দ্রুত সফলভাবে কার্যকর করার জন্য আমাদের সব শক্তি নিয়োজিত করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে হবে। পেছনে ফেরার কোনো সুযোগ আমাদের নেই। আমাদের এই কাঙ্ক্ষিত রূপান্তরের লক্ষ্য হবে সব ধরনের বৈষম্য অবসানের রাজনৈতিক আয়োজন নিশ্চিত করা। এ দেশে গণতান্ত্রিক ও নাগরিক সমতাভিত্তিক একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান বলেন, আপনারা এই সংলাপে তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন। সংস্কার বিষয়ে আমাদের মধ্যে ঐকমত্য প্রয়োজন। এই তিন লক্ষ্যের কোনোটিকে ছাড়া কোনোটি সফল হতে পারবে না। ঐক্যবিহীন সংস্কার কিংবা সংস্কারবিহীন নির্বাচন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পারবে না।ঐক্য হলো মূল শক্তি এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমাদের ঐতিহাসিক মাত্রায় বলিয়ান করেছে। গত পাঁচ মাসে এই ঐক্য আরও শক্তিশালী হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধ শক্তি আমাদের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টি করার ক্রমাগত প্রয়াস চালাতে থাকায় আমাদের ঐক্য আরও মজবুত হচ্ছে।প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এমন রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় পরিবেশ থাকবে, যেখানে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু এই পরিচিতি অবান্তর হয়ে পড়বে। সবার একটিই পরিচয় আমি বাংলাদেশের নাগরিক এবং রাষ্ট্র আমাকে আমার সব অধিকার প্রদান করতে বাধ্য। রাষ্ট্রের কাছে এবং অন্য নাগরিকের কাছে আমার অন্য কোনো পরিচয় দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। যেখানে ব্যক্তিবন্দনার কোনো সুযোগ থাকবে না। দেশের ভেতরে বা বাইরে প্রভু-ভৃত‍্যের কোনো সম্পর্কের সুযোগ থাকবে না।তিনি আরও বলেন, আজকের সংলাপের মূল লক্ষ্য হলো, সবার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ কণ্ঠে ঘোষণা দেওয়া আমরা এই সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া হতে দেব না। আমরা একতাবদ্ধভাবে এই সুযোগের প্রতিটি মুহূর্ত সর্বোত্তম কাজে লাগাব।প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সংস্কারের যে মহান দায়িত্ব ঐতিহাসিক কারণে আমাদের কাছে এসে গেছে। এই দায়িত্ব আমাদের প্রত্যেককে, প্রতি নাগরিককে, রাজনৈতিক দলকে; প্রতিটি সামাজিক, অর্থনৈতিক, ব্যবসায়িক এবং ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর প্রত্যেককে দৃঢ়তার সঙ্গে সংস্কারের এই মহাযজ্ঞে আনন্দের সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। আজ আপনাদের সংলাপে ঘোষণা দিন কে কীভাবে এই মহান গৌরবের দায়িত্ব পালন করবেন।

এর আগে সকালে অনুষ্ঠানের সূচনা হয় জুলাই গণআন্দোলনে নিহত ও আহতদের পরিবারের সদস্যদের মঞ্চে উপবেশনের মধ্য দিয়ে। পরে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ফার্মগেটে নিহত নাফিসের বাবা গোলাম রহমান সংলাপের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।সংলাপে বাংলা একাডেমির চেয়ারম্যান সভাপতি আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, জাতীয় জীবনের দুর্বলতা হচ্ছে রাজনীতি। ৭২ সালে নতুন সংবিধান এলেও একটি সুষ্ঠু রাজনীতি গড়ে ওঠেনি। মূলত হাজার বছরের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, কেউ ভালো শাসন করেনি। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের আস্থা-বিশ্বাস আপাতত নেই। তারা যদি নিজেদের পুনর্গঠন করে সামনে আসে, তাহলে হয়তো মানুষ ভবিষ্যতে ভেবে দেখবে।অর্থনীতিবিদ মুশতাক হুসাইন খান বলেন, সংস্কার আর নির্বাচনের মধ্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা হচ্ছে। এতে ক্ষতি হবে দেশের। আসল সমস্যা ছিল ক্ষমতাকেন্দ্রীভূত হওয়া। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার কেবল আইন পরিবর্তন করেনি, নিজেদের আইনও নিজেরা ভাঙার শক্তি অর্জন করেছিল, এটাই ছিল সমস্যা। তাই আইন ঠিক করতে হবে, আবার ক্ষমতার কাঠামোও ঠিক করতে হবে।রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, ক্ষমতার গোপন কাঠামো ভাঙতে না পারলে আপনারা ভালো কিছু চাইলেও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। কারণ, আপনার দলেরই এমপি, নেতারা তা ঠেকিয়ে দেবে।সংলাপে ধারণাপত্র পাঠ করে সাংবাদিক মনির হায়দার বলেন, ফ্যাসিস্ট শাসনের পতন ঘটানোর জন্য সব চিন্তা ও ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। এটা ছিল জুলাই আন্দোলনের একটা অভূতপূর্ব দৃশ্য। এখন এক ধরনের অনৈক্যের সুর শোনা যাচ্ছে, যা গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের মানুষকে চিন্তিত করছে। ঐক্য না হলে সংস্কার হবে না, সংস্কার না হলে নির্বাচন হবে না। এ জন্য জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের জন্য এ আয়োজন করা হয়েছে।