দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল দশা দেশের শেয়ারবাজারে। মাঝে কিছুদিন ঘুরে দাঁড়ালেও ফের শেয়ারবাজারে চলছে অব্যাহত দরপতন। এতে বিনিয়োগকারীরা প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাচ্ছেন। বাজারের পতন ঠেকানোর কোনো উপায় যেন মিলছে না। বরং দিন যত যাচ্ছে বিনিয়োগ করা পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। নিয়ন্ত্রক সংস্থার ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন, ব্যাংকের সুদের হার বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে রয়েছে কারসাজি চক্রের দৌরাত্ম্য- সবমিলিয়ে শেয়ারবাজারের এমন দশা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।তারা বলছেন, ব্যাংকের সুদের হার বেড়ে সাড়ে ১১ শতাংশ হয়েছে। বাজারে সাপোর্ট দেওয়ার দায়িত্বে থাকা ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) টাকার অভাবে পড়েছে। ব্যাংক, মার্চেন্ট ব্যাংক, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলো শেয়ার কেনার বদলে বিক্রির চাপ বাড়াচ্ছে। আবার কিছু খাতের প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। সবকিছু মিলিয়েই শেয়ারবাজারে টানা দরপতন চলছে।বিশ্লেষকদের মতে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ারবাজার নিয়ে ছড়ানো হচ্ছে নানান গুজব। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) দায়িত্বশীলদের নিয়ে নানান কটু কথা বলা হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে বাজারে এখন চরম আস্থার সংকট।
অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশনের চার বছর মেয়াদের শেষ সময়ে এসে শেয়ারবাজার এমন দরপতনের মধ্যে পড়ায় কমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর নানানভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিনিয়োগকারীরা। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানান কটু কথা বলছেন।করোনা মহামারির কারণে শেয়ারবাজারে যখন বড় ধরনের ধস নামে, সেই কঠিন সময়ে বিএসইসির হাল ধরে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন। চার বছরের জন্য দায়িত্ব পাওয়া এই কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী মে মাসে। দায়িত্ব নেওয়ার পর বন্ধ শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরুসহ বেশ কয়েকটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিনিয়োগকারীদের প্রশংসা কুড়িয়েছে বর্তমান কমিশন।তবে দীর্ঘদিন ফ্লোর প্রাইস দিয়ে শেয়ারের দাম এক জায়গায় আটকে রেখে বড় ধরনের সমালোচনার মধ্যে পড়ে বর্তমান কমিশন। বিভিন্ন পক্ষের সমালোচনার মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে শেয়ারবাজার থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয় বিএসইসি। ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর সাময়িক মূল্য সংশোধনের পর শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়ায়। লেনদেন বেড়ে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি চলে আসে। সূচক বেড়ে ২২ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে চলে যায়।এমন পরিস্থিতিতে জেড গ্রুপ নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সিদ্ধান্তহীনতা শেয়ারবাজার আবার অস্থিতিশীল করে তোলে। কীসের ভিত্তিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি জেড গ্রুপে যাবে, সে বিষয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এক নির্দেশনা জারি করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। ওই নির্দেশনার শেষ পয়েন্টে বলা হয়, ইস্যুয়ার কোম্পানির পরবর্তী লভ্যাংশ সংক্রান্ত ঘোষণা অথবা বার্ষিক/অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ সংক্রান্ত ঘোষণার দিন থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে।