ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের শীর্ষে সিটি ব্যাংকডাকসু নির্বাচনের প্রচার শুরু আজ থেকে, দুজনের প্রার্থিতা বাতিলের সুপারিশএকযোগে জেলা আদালতের ২৩০ বিচারক বদলিযুক্তরাষ্ট্র-চীনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ঝুঁকিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন৭ হাজার রান ও ৫০০ উইকেটের মালিক এখন সাকিব
No icon

ছয় বড় চ্যালেঞ্জে পুলিশ

ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভেঙে পড়ে পুলিশের চেইন অব কমান্ড। এরপর পেরিয়ে গেছে এক বছরেরও বেশি সময়। এর মধ্যে বাহিনীটির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে আছে। কিন্তু এখনও অন্তত ৬টি বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে পুলিশের সামনে। এগুলো হচ্ছে- বাহিনীটির অভ্যন্তরে সংস্কার, অপরাধ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কাক্সিক্ষত উন্নয়ন, ক্ষমতার পালাবদলকালে পুলিশের থানা ও ফাঁড়ি থেকে লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার, জুলাই অভ্যুত্থানকালে ছাত্র-জনতার হত্যাকারী আসামিদের গ্রেপ্তার, জুলাই অভ্যুত্থান মামলার তদন্তকাজ শেষ করা এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানে যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ। প্রতিটি ক্ষেত্রেই দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে বাহিনীটিকে। এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।সাবেক ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) মো. আশরাফুল হুদা  বলেন, পুলিশের সামনে যে ৬টি বড় চ্যালেঞ্জের কথা বলা হচ্ছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব চ্যালেঞ্জ উৎরে যেতে হলে পুলিশের সিনিয়র অফিসারদের তদারকি বাড়াতে হবে। এ ছাড়া সব পর্যায়ের পুলিশকে এক হয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। মাঠপর্যায়ে অর্পিত দায়িত্বগুলো তদারকির মাধ্যমে যথাসময়ে আদায় করে নিতে হবে। এর পাশাপাশি মাঠ পুলিশের কল্যাণে তাদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়েও গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, পুলিশের অভ্যন্তরীণ সংস্কার কাজগুলো এগিয়ে নিতে গৃহীত পদক্ষেপগুলোতেও অধিকতর দৃষ্টি দিতে হবে। পাশাপাশি জুলাই অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত হত্যা মামলার তদন্ত এবং এসব মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কাক্সিক্ষত উন্নয়ন এবং বেহাত অস্ত্র উদ্ধারে গোয়েন্দা নজরদারি আরও বাড়াতে হবে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) এএইচএম শাহাদাত হোসাইন  বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, অভ্যন্তরীণ সংস্কারসহ আরও যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা উত্তরণে আন্তরিকভাবে কাজ করছে পুলিশ বাহিনী। এজন্য পুলিশ সদর দপ্তরে একাধিক কমিটি দায়িত্ব পালন করছে। বিভিন্ন পর্যায় থেকে এসব বিষয় তদারকি করা হচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মামলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে গৃহীত কাজের অগ্রগতি কতটুকু, এ বিষয়ে প্রতিনিয়ত হালনাগাদ তথ্য নিচ্ছেন খোদ আইজিপি মহোদয়।অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ক্ষমতার পালাবদলের এক বছর পরও দেশের অপরাধ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মানুষের উদ্বেগ কাটেনি। খুনোখুনি, মব ভায়োলেন্স, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই লেগেই আছে। সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত খুনের ঘটনায় নৃশংসতার মাত্রাও বেড়েছে। গুলি করে হত্যার পাশাপাশি ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হচ্ছে মানুষকে। বেড়েছে গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনাও। মানুষের মধ্যে কথায় কথায় নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার প্রবণতা কমছেই না। থামছে না মব ভায়োলেন্স। অপরাধ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অপারেশন ডেভিল হান্টের পর এখন চলছে চিরুনি অভিযান । এতেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কাক্সিক্ষত মাত্রায় উন্নতি হয়নি। এমন প্রেক্ষাপটে অপরাধ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কাক্সিক্ষত উন্নয়ন বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল?্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক   বলেন, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো আইনগতভাবে মোকাবিলা করার জন্য বাস্তবতার নিরিখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মব সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ, থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার এবং নির্বাচনে নানা ধরনের অগণতান্ত্রিক শক্তির উত্থান নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সম্পর্কিত বিষয়গুলোর ন্যায্যতা আইনগতভাবে নিশ্চিত করতে না পারলে অপরাধীরা নানাভাবে সক্রিয় হবে এবং নানা ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে অপরাধমূলক তৎপরতা অব্যাহত রাখবে। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিজেদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দূর করে বাস্তবতা বিচার্যে জনস্বার্থ নিশ্চিত করার আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অপরাধীর বিরুদ্ধে অপরাধের মাত্রার ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। এর বাইরে রাজনৈতিক পরিচয়সহ সব ধরনের প্রভাব বিস্তারকারী পরিচয় এড়িয়ে সমাজে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আইনের সফল ও কার্যকর প্রয়োগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক ও সজাগ ভূমিকা পালন করতে হবে। এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।গত বছর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে পুলিশ। এতে সারাদেশে নারী, শিশুসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ হতাহত হয়। এ ঘটনায় গত এক বছরে সারাদেশে ইতোমধ্যে ১৭৩০টি মামলা রুজু হয়। এর মধ্যে ৭৩১টি হত্যা মামলা। ইতোমধ্যে ২৯টি মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে। বাকি মামলাগুলো তদন্তাধীন। এসব মামলার তদন্ত শেষে সংশ্লিষ্ট আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এসব মামলা তদারকি করতে কয়েকটি পর্যায়ে মেন্টর কমিটি কাজ করছে। পুলিশ প্রধান বাহারুল আলম এসব মামলার তদন্তের অগ্রগতি জানতে প্রতি সপ্তাহে বৈঠক করছেন তদন্ত কর্মকর্তাসহ দায়িত্বশীলদের সঙ্গে। তিনি তদন্তের ত্রুটি বিচ্যুতি ধরিয়ে দিয়ে তা সংশোধনে দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন।