আলু নিয়ে আবার বিপাকে পড়েছেন জয়পুরহাটের কৃষক। দাম না পেয়ে তাদের স্বপ্ন ভেস্তে যেতে বসেছে। মাঠ বা সড়কের পাশ থেকেই পাইকারি প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ১১ থেকে ১৩ টাকায়, যা উৎপাদন খরচের চেয়ে কম। কৃষকরা বলছেন, আলু বিক্রি করে লাভ হচ্ছে না।কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জয়পুরহাটের বাজারে বিগত পাঁচ বছরে আলুর গড় পাইকারি দাম ছিল ২০২০ সালে ২৯.৫০ টাকা, ২০২১ সালে ২৫.৭০ টাকা, ২০২২ সালে ১৯.২০ টাকা, ২০২৩ সালে ৬০.৮০ টাকা এবং ২০২৪ সালে ৪৮.৫০ টাকা। এ বছর মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ১১ থেকে ১৩ টাকায়।কৃষক ও পাইকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগাম জাতের প্রতি কেজি ডায়মন্ড আলু ১১ থেকে ১৩ টাকায়, কার্ডিনাল ও ক্যারেজ ১০ থেকে ১১ টাকায়, লাল পাকরি (দেশি) ১২ থেকে ১৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চাষিরা উৎপাদন করে লোকসান গুনলেও হাত বদলে ব্যবসায়ীরা লাভ করছেন ভালোই। খুচরা বাজারে জাতভেদে আলুর কেজি গতকালও ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় এবার আলু চাষে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪০ হাজার হেক্টরে। চাষ হয়েছে ৪৩ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে কালাই উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ১০ হাজার ৯০৫ হেক্টর, ক্ষেতলালে ৯ হাজার ২২০, পাঁচবিবিতে ৮ হাজার ৯৪৫, সদর উপজেলায় ৭ হাজার ৮০০ ও আক্কেলপুরে ৬ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। এবার আলুর চাষ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ লাখ ৫৬ হাজার টন।
রোববার পাইকারি দামে আলু কিনতে কালাই উপজেলার হারুঞ্জা মাঠে এসেছেন নওগাঁর ধামুইরহাট উপজেলার মুনশ কান্তি। তিনি বলেন, আমার ৩৫ বছরের দোকানদারি। পাঁচ বছরের মধ্যে এবার আলুর দাম সর্বনিম্ন। মাত্র তিন মাস আগে ৬০ কেজি ওজনের দুই বস্তা আলু কিনেছি সাড়ে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকায়। একই পরিমাণ আজ নিয়েছি ১ হাজার ৪৫০ টাকা দিয়ে। এত কম দামে কয়েক বছরে কিনতে পারিনি।ঢাকা ও চট্টগ্রাম মোকামে আলু পাঠান কালাই উপজেলার পাইকার ছাইদুর রহমান। তিনি বলেন, পাঁচ বছরের মধ্যে এবার কম দামে আলু বিক্রি হচ্ছে। এতে ভোক্তা খুশি হলেও কৃষকরা খুব কষ্টে আছেন। আগামী রমজানের মধ্যেও আলুর দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নাই।আরেক পাইকার মিঠু ফকির বলেন, রোববার জয়পুরহাটের বিভিন্ন মাঠে আলুর বাজার গেছে সর্বোচ্চ ১৩ টাকা কেজিতে। গত রোববার রাতে মোকাম থেকে এরকম দামেই আলু কিনতে বলা হয়েছে। বলে দেওয়া দাম অনেক সময় ঠিক থাকে না। কারণ, দাম কম হলে কৃষকরা আলু ওঠাতে চান না। তখন ২-১ টাকা বেশি দিয়ে আলু কিনতে হয়। অর্থাৎ সরবরাহের ওপর নির্ভর করে বাজারদর।পুনট বাজারের আড়তদার মোশারফ হোসেন বলেন, বাজারে যে দামে আলু বিক্রি হচ্ছে তাতে কৃষকের চাষের খরচও উঠবে না। বেশি দামে বীজ, সার ও কীটনাশক এবং শ্রমিকের মজুরি মিলে প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ পড়েছে প্রায় ২০ টাকার মতো। এখন এক কেজি আলু পাইকারিতে ১১ থেকে ১৩ টাকা দামে বিক্রি করছেন।