বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি করতে উপাচার্যদের আবারও চিঠিঢাকায় শীত কেমন থাকবে, জানাল আবহাওয়া অফিসশিগগির দেশে বিনিয়োগের চিত্র ঘুরে দাঁড়াবেদাবির ঘেরাটোপে বন্দি শিক্ষাসারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ
No icon

দাবির ঘেরাটোপে বন্দি শিক্ষা

বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে দেশের কোথাও না কোথাও মাঠে নামছেন শিক্ষার্থীরা। বসে নেই শিক্ষক-কর্মচারীরাও। এভাবে একের পর এক দাবি নিয়ে মাঠে সরব থাকায় শিকেয় উঠেছে শিক্ষা। এর মধ্যে গত রবিবার থেকে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা আলাদা হওয়ার দাবিতে আন্দোলনে নামেন, এতে সংঘর্ষেও জড়িয়ে পড়েন। গতকাল সোমবার তাদের প্রথম দাবি মেনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা ঘোষণা করা হলেও তাদের জন্য একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিসহ ৬ দফা দাবি নিয়ে আবার অবরোধের ঘোষণা দেন তারা। একই দিন গুচ্ছ ভর্তি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের গেটে তালা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে এবতেদায়ি মাদ্রাসারশিক্ষকদের আন্দোলন চলছে, যাতে আজ মঙ্গলবার ১০টার মধ্যে দাবি পূরণের আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে।বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অব্যাহত আন্দোলন সংগ্রামের ফলে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার অবস্থা তৈরি হয়েছে। দ্রুত সহনশীলতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে না পারলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।জানা গেছে, এবতেদায়ি শিক্ষকরা দাবি আদায়ে গতকাল সরকারকে আলটিমেটাম দিয়েছেন। আজ সকাল ১০টার মধ্যে মধ্যে দাবি পূরণ না হলে শাহবাগ থানা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাওসহ ঢাকায় অবস্থান নেওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

অন্যদিকে ২৪ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা বহাল রাখার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ভবনের গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় তারা ইউজিসি ভবনের গেটে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন করেন। পরে সোমবার সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে সিদ্ধান্ত দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে জিএসটি গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষা বহাল রেখে নির্দেশনা জারি করে মন্ত্রণালয়।সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা রবিবার সন্ধ্যা থেকে তাদের দাবি নিয়ে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের গেটে অবস্থান নেয়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করলে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তার আগে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের এমন দাবি এবং অবস্থান হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা শিক্ষা উপদেষ্টা কোনো দিকনির্দেশনা না দিয়ে পুলিশ দিয়ে দমন করার চেষ্টা করায় আন্দোলনের তাপ ছড়িয়ে দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

এ বিষয়ে ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, সাত কলেজের সমস্যা আগের সরকার করে গেছে। এটা খুব ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। এই সাত কলেজকে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধীনে আনা অত্যন্ত অসঙ্গত ছিল। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের পক্ষে এটা ম্যানেজ করা একেবারে অসম্ভব। বিশ^বিদ্যালয় তার নিজের পরীক্ষা নিতেই হিমশিম খেয়ে যায়। সেই জায়গায় সাত কলেজের পরীক্ষা তাদের প্রশ্নপত্র তৈরি করা ফলাফল দেওয়া কঠিন কাজ ছিল। এর সমাধান করা দরকার। সেই সমাধান দ্রুত করতে হবে। ছাত্রদের দীর্ঘ দিনের ভোগান্তি আছে, তারা আন্দোলন করছে এটা উপেক্ষা করার বিষয় না। মাদ্রাসার শিক্ষকরা যে আন্দোলন করেছে সেটা মাদ্রাসা বোর্ড দিয়ে সমাধান করা দরকার। মাদ্রাসা বোর্ডকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। এগুলো দ্রুত করা দরকার। এগুলোকে উপেক্ষা করা যাবে না।সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, শিক্ষা কার্যক্রম আন্দোলনের মধ্যেই আটকে যাচ্ছে। এভাবে আন্দোলনের ফলে শিক্ষকদের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের অন্য জায়গায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এটা খুব জরুরিভাবে মোকাবিলা করা দরকার। যত দেরি করবে, ততই ক্ষতি হবে।

এদিকে সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থেকে বের করে দিয়ে চলতি বছর থেকে ভর্তি বন্ধ করার সিদ্ধান্তে হতবাক হয়েছেন সাত কলেজের অধ্যক্ষ এবং বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। যেখানে ভর্তি কার্যক্রম চলছিল, সেখানে হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্ত হলে তারা কীভাবে ভর্তি কার্যক্রম চালাবে। তা ছাড়া গত ৮ বছরে এই সাত কলেজ থেকে আয়ের যে ভাগ ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় নিয়েছে তার কী হবে- এ প্রশ্নও তুলেছন সংশ্লিষ্টরা। এভাবে হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে কয়েক লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন।এই সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের বিষয়ে সরকারের ভাবনা জানা না গেলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এসব কলেজের জন্য আলাদা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে সরকার। সরকারের পক্ষে এ নিয়ে ইউজিসি কাজ করছে।