জুলাই আন্দোলনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতির পাশাপাশি বৈশ্বিক নানা সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পাশাপাশি নানা কারণে দেশে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ কমেছে। তবে শিগগির এই চিত্র ঘুরে দাঁড়াবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান।সোমবার (২৭ জানুয়ারি) রাজধানীর গ্রিনরোডে বেপজা কমপ্লেক্সে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।বেপজার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) এ এস এম আনোয়ার পারভেজের সঞ্চালনায় আয়োজনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেপজার সদস্য (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. আশরাফুল কবীর। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বেপজার সদস্য (প্রকৌশল) মো. ইমতিয়াজ হোসেন, সদস্য (অর্থ) আ ন ম ফয়জুল হকসহ বেপজার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ।আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান বলেন, আমি আশা করব বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আরও বেশি বিনিয়োগ করবেন। কারণ, এখন পর্যন্ত আমি দেখিনি কোনো ব্যবসায়ী বা বিনিয়োগকারী বলেছেন যে তারা আসবেন না। এনার্জি, গ্যাস, আর্থিক খাত, বন্দর ব্যবপস্থাপনা, ব্যবসার পরিবেশ, এলডিসি গ্রাজুয়েশন ইত্যাদির মতো কিছু চ্যালেঞ্জ এখনো আছে। তবে এসব চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠে শিগগির আমরা ঘুরে দাঁড়াব।
তিনি আরও বলেন, বেপজার জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ আনয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের মোট প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগে (এফডিআই) এর অবদান ২৯ শতাংশ। অন্য দিকে, বৈশ্বিক বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্যেও দেশের জাতীয় রপ্তানিতে ইপিজেডসমূহের অবদান ১৬ শতাংশ।যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন সরকার আসায় বিনিয়োগ বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানিকৃত পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। ফলে চীনের শিল্প কারখানাগুলো বিভিন্ন দেশে স্থানান্তরিত হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সবার ওপরে আছে বলে মনে করেন তিনি। জানান, একটি চীনা কোম্পানি এরই মধ্যে ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে বলে জানিয়েছে।বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে তিনি বলেন, আর্থিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় দেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর মধ্যে বেপজা প্রথম স্থান অর্জন করেছে। বেপজার বিভিন্ন রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় বিশ্বের ৩৮টি দেশ বিনিয়োগ করেছে।
বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আরও বলেন, বেপজার শুরু থেকে ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত মোট ৪৪৯টি ইপিজেডে মোট ৬৯১৪ দশমিক ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। যেখানে ৫ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৫ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং রপ্তানি হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯১৩ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বেপজার ৪৪৯টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ৩টি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে এ শ্রেণিতে, যার সংখ্যা ২৫৮টি। যৌথ মালিকানার প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে বি শ্রেণিতে, যার সংখ্যা ৪৯টি এবং দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে সি শ্রেণিতে, যার সংখ্যা ১৪২টি। এছাড়া ১০৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়ায় রয়েছে।তিনি বলেন, রপ্তানিতে তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরতা কমাতে দেশের ইপিজেড সমূহে রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও বৈচিত্র্য আনয়নে বেপজা কাজ করছে। ইপিজেডে উৎপাদিত পণ্যের ৪৮ শতাংশ বৈচিত্র্যময় পণ্য। পাশাপাশি শ্রম ব্যবস্থাপনা, শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিতকরণ, পরিবেশবান্ধব ইপিজেড নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি বিষয়েও বেপজা সুনাম ধরে রেখেছে।