বেশি সংস্কার না চাইলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনটিউলিপ-শেখ হাসিনা-শেখ রেহানাসহ ৭ জনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তলবমৃত্যুর পরও দেশে আসছে ‘যোদ্ধা’দের রেমিট্যান্সআসছে দীর্ঘস্থায়ী শৈত্যপ্রবাহ, সঙ্গে ঘন কুয়াশামুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের অধীনে জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর গঠিত হবে
No icon

মৃত্যুর পরও দেশে আসছে ‘যোদ্ধা’দের রেমিট্যান্স

প্রতিনিয়ত পরিবারের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন প্রবাসী কর্মীরা। তবে দেশের রিজার্ভ ও রেমিট্যান্স প্রবাহ সচল রাখতে মৃত প্রবাসী কর্মীর ভূমিকাও যে অনস্বীকার্য, তা অনেকেরই অজানা। সংযুক্ত আরব আমিরাতে মৃত্যুবরণ করা তেমনি কিছু প্রবাসী যোদ্ধা রেমিট্যান্স প্রেরণে ভূমিকা রাখছেন।কেবল আরব আমিরাত প্রবাসীদের গত বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মৃত প্রবাসী কর্মীদের বকেয়া বেতন ও মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ আদায় হয়েছে ৩৬ কোটি টাকার বেশি। এ ছাড়া একেবারে দেশে ফিরে আসা কয়েকজন প্রবাসী কর্মীকে ১ কোটি টাকার বেশি বকেয়া পরিশোধ করা হয়, যা রেমিট্যান্স হিসেবে গেল বছর দেশের অর্থনীতিতে যোগ হয়েছে।দশ বছর আগে আবুধাবিতে কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় মারা যান চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার রাজারামপুরের রবু মণ্ডলের ছেলে মজিবুর রহমান। তাঁর পরিবার আবুধাবি বাংলাদেশ দূতাবাসকে এই মামলা পরিচালনার ক্ষমতাপত্র প্রদান করে। দূতাবাস তাদের নিয়োগকৃত ল ফার্মের মাধ্যমে মামলা পরিচালনা করে স্থানীয় আদালতের রায় নিশ্চিত করে। আদালত এই প্রবাসীর মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ হিসেবে ব্লাডমানি বাবদ ১ লাখ ৮৮ হাজার ৫৭২ দিরহাম আদায় করেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬১ লাখ ২৮ হাজার ৫৯০ টাকা গত বছরের জুলাইয়ে মৃতের স্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয়।

২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকার কাফরুলের পূর্ব কাজীপাড়ার আব্দুস সোবহানের ছেলে দুবাই প্রবাসী মোহাম্মদ মোরশেদ আলমের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়। দুবাইয়ের বাংলাদেশ কনস্যুলেটের শ্রম কল্যাণ উইং মৃতের নিয়োগকর্তা বেলহাসা প্রজেক্ট এলএলসি কোম্পানি থেকে বকেয়া বেতন ও গ্র্যাচুইটি বাবদ ১ লাখ ৯২ হাজার ৩১৪ দিরহাম আদায় করে। গত নভেম্বরে জনতা ব্যাংক দুবাই শাখার মাধ্যমে আদায়কৃত অর্থের সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রা ৬৩ লাখ ৯৪ হাজার ৪৪০ টাকা উত্তরাধিকারীদের কাছে হস্তান্তরের জন্য পাঠানো হয়।আবুধাবি বাংলাদেশ দূতাবাস ও দুবাই বাংলাদেশ কনস্যুলেট জানায়, আমিরাতে প্রতিবছর কিছু প্রবাসী কর্মী কর্মস্থলে, সড়ক দুর্ঘটনায় কিংবা কারও দ্বারা আক্রান্ত হয়ে নিহত হন। তাদের পরিবারকে আইনি সহায়তা ও মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ আদায়ে সহযোগিতা দেয় বাংলাদেশ মিশন। ক্ষতিপূরণ আদায় হলে সেই অর্থ ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মাধ্যমে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।বর্তমানে আবুধাবির বাংলাদেশ দূতাবাসের অধীনে এ ধরনের ৬৮টি মামলা চলমান রয়েছে। এ বছর পাঁচটি মামলা নিষ্পত্তি হলে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ আদায় হয় ৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, যা পরিবারের কাছে হস্তান্তরের জন্য ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। দুবাই কনস্যুলেটের অধীনে চলতি বছর এ ধরনের ৩২টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। চলমান রয়েছে মৃত্যুজনিত আরও ৩১টি মামলা। নিষ্পত্তি হওয়া মামলা থেকে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ আদায় হয়েছে ২২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

এ ছাড়া গেল বছর ১৫৫ জন মৃত প্রবাসী কর্মীর বকেয়া পাওনা ১০ কোটি ২৬ লাখ টাকা আদায় করেছে দুবাই বাংলাদেশ কনস্যুলেট। আবুধাবি দূতাবাস গত বছর ৬২ জন মৃত প্রবাসী কর্মীর বকেয়া পাওনাদি আদায় করে প্রায় ১ কোটি ২২ লাখ টাকা। পাশাপাশি ২৫ জন দেশে প্রত্যাবর্তনকারী প্রবাসীর ১ কোটি ৮ লাখ টাকা কোম্পানি ও নিয়োগকর্তা থেকে আদায় করে দেশে পাঠানো হয়।আবুধাবি দূতাবাসের কাউন্সেলর (শ্রম) হাজরা সাব্বির হোসেন বলেন, বৈধভাবে কর্মরত প্রবাসী কর্মীর মৃতদেহ দেশে পাঠানোর ছাড়পত্র প্রদানের সময় দূতাবাস কোম্পানি থেকে তাঁর বকেয়া পাওনাদি পরিশোধ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে থাকে।দুবাই বাংলাদেশ কনস্যুলেটের প্রথম সচিব (শ্রম) শাহানাজ পারভীন বলেন, প্রবাসী কর্মীরা মারা গেলে কখন সেই ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে তা নির্ভর করে স্থানীয় আদালতের রায়ের ওপর। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ক্ষতিপূরণ আদায় সাপেক্ষে মৃতের উত্তরাধিকারীদের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করি।