অক্টোবরে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর থেকে গাজার ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের জন্য অনুদান সংগ্রহে বিপর্যয়কর ধস নেমেছে। ত্রাণকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা সতর্ক করে বলছেন, বিশ্ববাসী ভুল ধারণা করছে যে ফিলিস্তিনিদের আর সাহায্যের প্রয়োজন নেই। অথচ সামনেই তীব্র শীত। লাখ লাখ মানুষ অসুস্থতা, ক্ষুধা ও আবাসন সংকটে ধুঁকছে। অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক মেগান হল জানান, যুদ্ধ চলাকালে তিনি সপ্তাহে প্রায় ৫,০০০ ডলার সংগ্রহ করতে পারতেন, যা অক্টোবরে পুরো মাসে কমে মাত্র ২,০০০ ডলারে ঠেকেছে। তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতির কারণে বিশ্ব মনে করছে সংকট কেটে গেছে। অথচ দুই বছর ধরে বাস্তুচ্যুত এসব মানুষের কাছে শীতের কাপড় বা কম্বলটুকুও নেই।শুধু ব্যক্তিগত উদ্যোগই নয়, গাজা স্যুপ কিচেনের মতো বড় উদ্যোগেও অনুদান ৫১% কমেছে। সেভ দ্য চিলড্রেন এবং অক্সফামের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাও অনুদানে বড় পতন দেখছে। জাতিসংঘের মতে, গাজার ৭০% মানুষ অর্থাৎ প্রায় ১৯ লাখ মানুষ ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামোর মধ্যে কোনোমতে টিকে আছে।
গাজা নগরীর ২৮ বছর বয়সী আহমেদ আল-দিব জানান, ১৪ সদস্যের পরিবারের খাবার ও ভাড়ার জন্য তিনি পারস্পরিক সহায়তা তহবিলের ওপর নির্ভরশীল। সেপ্টেম্বরে তিনি তিন হাজার ডলার সহায়তা পেলেও অক্টোবরে তা ৩০০ ডলারে নেমে আসে। ভাড়া দিতে না পারলে পরিবার নিয়ে তাকে রাস্তায় থাকতে হবে।ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস প্রায় দুই দশক ধরে গাজা শাসন করে আসছে। দীর্ঘ ছয় দশকের শ্বাসরুদ্ধকর অবরোধ ও অব্যাহত ইসরায়েলি নিপীড়নের জবাব হিসেবে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর তারা শত্রুরাষ্ট্রের ভেতরে ঢুকে একটি উৎসবে সশস্ত্র হামলা চালায়। এতে ১১৩৯ জন নিহত হন। তারা ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায়। ওই দিন থেকেই হামাসকে নির্মূলে গাজায় সর্বাত্মক সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। দুই বছরের এই যুদ্ধে ৬৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ৭১ হাজারের বেশি মানুষ। এমনকি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পরিসংখ্যান মতে, ৭৫ শতাংশেরও বেশি নিহত ব্যক্তি হামাসের যোদ্ধা নয়।গাজা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০২৩ সালের ২১ নভেম্বর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। হেগভিত্তিক এই আদালতের এখতিয়ার ইসরায়েল অস্বীকার করে আসছে এবং গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগকে মিথ্যা দাবি করে আসছে।