গ্রহণ একটি বর্ণিল আর আকর্ষণীয় মহাজাগতিক ঘটনা। সে কারণেই গ্রহণকে ঘিরে রয়েছে মানুষের গভীর আগ্রহ আর গ্রহণকে ঘিরে গড়ে উঠেছে নানাধরনের পর্যটন আকর্ষণ। আগামী ৮ এপ্রিল বিরল সূর্যগ্রহণের সাক্ষী হতে যাচ্ছে বিশ্ব। এদিন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে ফেলবে চাঁদ। ফলে দিন হবে রাতের মতো অন্ধকার।
সাধারণত আমরা দুই ধরনের গ্রহণের কথা জানি- চন্দ্রগ্রহণ এবং সূর্যগ্রহণ। কিন্তু তৃতীয় আরেক ধরনের গ্রহণ রয়েছে যেটি ঘটে অনেক দূরের দুটি তারার মধ্যে।
সূর্যগ্রহণ কী? চাঁদ যখন পৃথিবীর কক্ষপথে ঘোরে, তখন তার প্রদক্ষিণ পথে কখনও কখনও চাঁদ এসে পড়ে সূর্য এবং পৃথিবীর মাঝখানে। তখন তারা থেকে আলোর বিচ্ছুরণ বাধাগ্রস্ত হয় এবং সূর্যের গ্রহণ ঘটে।অন্যভাবে বললে বলা যায়, চাঁদ এই সময় পৃথিবীকে তার ছায়ায় ঢেকে ফেলে।সূর্যগ্রহণ হয় তিন ধরনের। আর এই ধরনগুলো নির্ভর করে চাঁদ সূর্যকে কতটা ঢেকে ফেলছে তার ওপর।
পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ
সূর্যের পূর্ণগ্রাস গ্রহণ ঘটে যখন সূর্য, পৃথিবী এবং চাঁদ এমন অবস্থানে আসে যখন চাঁদ সূর্যের আলোকে সম্পূর্ণভাবে ঢেকে দেয়। তখন কয়েক সেকেন্ডের জন্য (কখনও কখনও এমনকি কয়েক মিনিটের জন্যও) আকাশ এতই অন্ধকার হয়ে যায় যে মনে হয় সেটা রাতের আকাশ।নাসার কথায়, মহাজাগতিক একটা সমন্বয় ঘটলেই একমাত্র সূর্যের পূর্ণ গ্রহণ সম্ভব হয় সূর্য চাঁদের তুলনায় ৪০০ গুণ চওড়া এবং চাঁদ পৃথিবী থেকে যত দূরে, সূর্য তার চেয়ে আরও ৪০০ গুণ বেশি দূরে। এই ভৌগলিক অবস্থানের অর্থ হল, চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবী যখন একই লাইনে একেবারে সঠিক জায়গায় এসে পৌঁছয়, তখন সূর্য পুরোপুরি ঢেকে যায় এবং সূর্যের পূর্ণগ্রাস গ্রহণ হয়, বলছে নাসা।পৃথিবী পৃষ্ঠে যে লাইন বরাবর চাঁদের ছায়া পড়ে তাকে বলা হয় পূর্ণ গ্রাসের পথ । আর এই ছোট পথের মধ্যেই পুরো অন্ধকার নেমে আসার চোখ ধাঁধানো প্রক্রিয়াটি দেখা যায়। যে অংশে আলোর উৎস পুরো ঢেকে যায়, ছায়ার সেই ঘন অন্ধকারাচ্ছন্ন অংশকে লাতিন ভাষায় বলে আমব্রা । এই পথের দুপাশে কয়েক হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত গ্রহণ দেখা যায় আংশিকভাবে।
পুরো অন্ধকারে ঢেকে যাবার এই পথ থেকে পৃথিবীতে আপনার অবস্থান যত দূরে হবে, তত আপনি দেখবেন সূর্যের অপেক্ষাকৃত ছোট অংশ চাঁদে ঢাকা পড়েছে।আর গ্রহণ কতক্ষণ থাকবে সেটা নির্ভর করে, সূর্য থেকে পৃথিবীর অবস্থান, পৃথিবী থেকে চাঁদের অবস্থান আর পৃথিবীর কোন্ অংশ অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে তার ওপর, জানাচ্ছেন বিমিন।তত্ত্বগতভাবে, সূর্যের গ্রহণ সর্বোচ্চ ৭ মিনিট ৩২ সেকেন্ড পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে, বলেছেন চিলের এই জ্যোতির্বিজ্ঞানী।আমরা অনেক সময় ভাবি সূর্যগ্রহণ বেশ বিরল একটা প্রক্রিয়া। তা কিন্তু নয়। প্রতি প্রায় ১৮ মাস অন্তর সূর্যগ্রহণ হয়।যেটা আসলে খুবই বিরল সেটা হল একই স্থান থেকে সূর্যের পূর্ণগ্রাস গ্রহণ দেখতে পাওয়া। ঠিক একই জায়গা থেকে সূর্যের পূর্ণ গ্রহণ দেখা যায় গড় হিসাবে প্রতি ৩৭৫ বছরে একবার।
এবারের পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ নিয়ে বিস্ময়কর ১০টি তথ্য
১. এবারের পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ শুরু হবে প্রশান্ত মহাসাগরে আর শেষ হবে আটলান্টিকে।
২. মেক্সিকোতে সর্বকালের দীর্ঘতম সময় ধরে সূর্যগ্রহণ উপভোগ করা যাবে। এই সময় হতে পারে চার মিনিট এবং ২৯ সেকেন্ড।
৩. শেষ সূর্য গ্রহণের চেয়ে এবারের গ্রহণের পথ ধরে বিভিন্ন জায়গায় বেশি মানুষ বাস করবে।
৪. সূর্যের একটি লুকানো অংশ প্রকাশ করবে।
৫. সূর্য তার নাটকীয় সৌরবলয়ের সবথেকে কাছাকাছি আসবে।
৬. দুটি গ্রহ এবং একটি ধূমকেতুও দেখা যেতে পারে।
৭. সূর্য গ্রহণের ফলে ৩৬০ ডিগ্রি সূর্যাস্ত হতে পারে।
৮. গ্রহণ যতই চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছবে বাতাস তত শীতল হয়ে উঠবে। আকাশের উজ্জ্বলতা ম্লান হয়ে পড়বে।
৯. প্রাণীরাও সূর্যগ্রহণে প্রতিক্রিয়া দেখাবে। মৌমাছিরা গুঞ্জন বন্ধ করে দেবে। পাখিরা শিস বাজাবে না। পোকামাকড় কিচিরমিচির শুরু করবে।
১০. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরবর্তী পূর্ণ সূর্য গ্রহণের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে।
উল্লেখ্য, ৮ এপ্রিল মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে ফেলবে চাঁদ। ৫৪ বছর পর এমন সূর্যগ্রহণ হওয়ায় নাসার বিজ্ঞানীরা এই সূর্যগ্রহণকে বিশেষ বলে বর্ণনা করেছেন। এর আগে ১৯৭০ সালে এমন সূর্যগ্রহণ হয়েছিল, আবার হতে পারে ২০৭৮ সালে।
বলা হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস, ওকলাহোমা, আরকানসাস, মিসৌরি, ইলিনয়, কেনটাকি, ইন্ডিয়ানা, ওহাইও, পেনসিলভানিয়া, নিউইয়র্ক, ভার্মন্ট, নিউ হ্যাম্পশায়ার এবং মেইন অঙ্গরাজ্য থেকে পূর্ণগ্রাস এই সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। মেক্সিকোর প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে অবস্থিত সৈকত শহর মাজাটলানের কাছে দর্শকরা ভালোভাবে পূর্ণগ্রাস গ্রহণ উপভোগ করতে পারবেন।