বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি করতে উপাচার্যদের আবারও চিঠিঢাকায় শীত কেমন থাকবে, জানাল আবহাওয়া অফিসশিগগির দেশে বিনিয়োগের চিত্র ঘুরে দাঁড়াবেদাবির ঘেরাটোপে বন্দি শিক্ষাসারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ
No icon

চ্যালেঞ্জ নির্ভুল ভোটার তালিকা

ভোটার তালিকা হালনাগাদের আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের পরপরই হালনাগাদের তারিখ নির্ধারণ করা হবে।এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। ভোটার নিবন্ধন কাজে ব্যবহৃত মালামালের বর্তমান অবস্থা জানতে মাঠপর্যায়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এবারের হালনাগাদে আগামী তিন বছরের তথ্য তথা ২০২৭ সালের ১ জানুয়ারি যাদের বয়স ১৮ হবে তাদের তথ্যও নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে বছরজুড়েই ভোটার হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কেউ চাইলে অনলাইনেও ভোটার হওয়ার আবেদন করতে পারেন। ২০০৭-২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা হয়। এ ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর নতুন করে ভোটারযোগ্যরা তালিকাভুক্ত হন এবং মৃতদের বাদ দেওয়া হয় হালনাগাদে। ইসির কর্মকর্তারা জানান, প্রতি বছর ভোটার তালিকা হালনাগাদ শেষে ২ জানুয়ারি খসড়া এবং ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। বছরজুড়েই এখন ভোটার হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আমরা প্রস্তুতি রাখছি, নির্দেশনা পেলেই কাজ শুরু হবে।

  সম্প্রতি এক বৈঠকে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার জন্য প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম শুরু করার কথা উঠেছে। এজন্য কী পরিমাণ সরঞ্জাম আছে, কী পরিমাণ লাগবে তার হিসাব মাঠ কর্মকর্তাদের জানাতে বলা হয়েছে। ইসি সচিব শফিউল আজিম লিখিত নির্দেশনায় বলেছেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। ২০২২ সালে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচির সময় দেওয়া হয়েছিল ৩ সপ্তাহ। তথ্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল বিদ্যমান ভোটারের ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। কার্যক্রম শেষে তথ্য সংগ্রহ দাঁড়িয়েছিল ৯ দশমিক ৮ শতাংশ এবং নিবন্ধন হয় ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। সে সময় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে তিন বছরের তথ্য আগাম নিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। এবারও তিন বছরের তথ্য একসঙ্গে নেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে বিভিন্ন ফরম মুদ্রণ, যন্ত্রপাতি ক্রয়, রেজিস্ট্রেশন, ডেটা আপলোড, আঙুলের ছাপ যাচাই, খসড়া ভোটার তালিকা প্রস্তুত, খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ, খসড়া ভোটার তালিকা ওপর দাবি/আপত্তি দাখিল ও নিষ্পত্তি এবং চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের জন্য সময় প্রয়োজন হয়। আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তারা ভোটার তালিকা নির্ভুলকরণের জন্য নতুন ভোটার নিবন্ধনের পাশাপাশি মৃত ভোটার কর্তন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন। এ ছাড়া মৃত ভোটার কর্তনের জন্য অনলাইন কিউআর কোড সংবলিত মৃত্যু নিবন্ধন সনদ সরবরাহের ব্যবস্থা রাখার জন্য প্রস্তাব করেন। অন্যদিকে দুই বা অধিক বছরের জন্য তথ্য নিলে ব্যক্তি জাতীয় পরিচয়পত্র পায়। কিন্তু ভোটার তালিকায় নাম না থাকার কারণে ভোট দিতে পারে না। ভোট দিতে না পারার কারণে ভোট কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। সেজন্য শুধু ভোটারযোগ্য ব্যক্তিদের এক বছরের তথ্য নেওয়ার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন অনেক কর্মকর্তা। আলোচনার পর ইসি সচিব শফিউল আজিম লিখিত নির্দেশনায় তিন বছরের তথ্য নেওয়ার প্রস্তুতি রাখতে বলেন। নির্দেশনায় সচিব বলেন, অনলাইন কিউআর কোড সংবলিত নাগরিকত্ব সনদ, জন্ম নিবন্ধন সনদ ও মৃত্যু নিবন্ধন সনদের জন্য স্থানীয় সরকারকে চিঠি দিতে হবে। যে কোনো সময় ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার জন্য সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এখন থেকেই সব বিষয়ে প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম শুরু করতে হবে। এক্ষেত্রে এক বা দুই বা তিন বছরের তথ্য সংগ্রহ করলে তার জন্য পৃথক সময়সূচি ও কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। অন্যদিকে, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো জনপ্রতিনিধি শূন্য থাকায় সারা দেশের ভোটার তালিকা হালনাগাদে জটিলতার আশঙ্কা করছেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা।

তারা বলছেন, ইউনিয়ন পরিষদে সমস্যা না হলেও সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় সমস্যা হবে। নতুন ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে জন্মসনদ এবং মৃত ভোটারের নাম কর্তনের ক্ষেত্রে মৃত্যু সনদ প্রয়োজন হয়। অনেক ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধির প্রত্যয়ন প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া ভোটার হালনাগাদের ক্ষেত্রে ভোটারের তথ্য সংগ্রহ এবং প্রচারণার জন্য জনপ্রতিনিধিদের সহায়তা নিয়ে থাকে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে এবারের হালনাগাদে এই দুই সনদ নিতে নাগরিকদের ভোগান্তি পোহাতে হবে। সেই সঙ্গে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো ইসিকে যে সহযোগিতা করে; সেই সহযোগিতা পাওয়া সম্ভব হবে না। সর্বশেষ ২ মার্চ ইসির প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুযায়ী- দেশে মোট ভোটার ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ২১ লাখ ৪৪ হাজার ৫৮৭ জন; আর নারী ভোটার ৫ কোটি ৯৭ লাখ ৪ হাজার ৬৪১ জন। এ ছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন ৯৩২ জন। বর্তমানে নারীর চেয়ে প্রায় ২৪ লাখ পুরুষ ভোটার বেশি। প্রতি বছর ভোটার তালিকা হালনাগাদ শেষে ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। ২০২৩ সালের ২ মার্চ ভোটার ছিল ১১ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ৪৪০ জন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরও ৫ লাখ নতুনদের যুক্ত করে ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৮৯ জন। হালনাগাদে যুক্ত হয়েছে ২১ লাখ ৬০ হাজার ৮৭১ জন। ভোটার সংখ্যার এ বৃদ্ধির হার ২ দশমিক ২৬ ভাগ। সব মিলিয়ে এখন ভোটার দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন, যা প্রায় মোট ১৭ কোটি জনসংখ্যার ৭১ দশমিক ৭৪ ভাগ।