আজ বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসএপ্রিলে ৪৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম বৃষ্টি অবশেষে রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টিবজ্রসহ শিলা বৃষ্টি হতে পারে যেসব অঞ্চলে আজ শুরু হচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন
No icon

প্রস্তুতির শেষ ধাপে ইসি

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হচ্ছে আগামী ১ নভেম্বর থেকে। নির্ধারিত সময়ে তফসিল ঘোষণার জন্য প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রাজনৈতিক দলগুলোর চলমান বিবাদের মধ্যেও এগিয়ে চলছে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের নির্বাচনী ট্রেন। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সসহ নির্বাচনী সামগ্রী ইসিতে পৌঁছতে শুরু করেছে। আগামী সপ্তাহে শুরু হবে মাঠপর্যায়ে বিতরণ। নির্বাচনী সামগ্রী ক্রয়, প্রশিক্ষণ ও সার্বিক প্রস্তুতিও শেষ পর্যায়ে। নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, আমাদের সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। এখন কেবল তফসিল ঘোষণাই বাকি।এদিকে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণায় অনড় বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। কূটনৈতিক মহলও সব দলের অংশগ্রহণ ও সুষ্ঠু ভোটগ্রহণে সরকার, ইসি, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে তাগিদ দিচ্ছে। এসবের মধ্যে নির্ধারিত সময়ে ভোটগ্রহণ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চললেও যথাসময়ে নির্বাচন আয়োজনে এগিয়ে যাচ্ছে ইসি। নির্বাচনী পরিবেশ নিয়েও চিন্তিত নয় কাজী হাবিবুল আউয়ালের কমিশন।

ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেছেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রয়েছে। আমাদের এখান থেকে এটা স্পষ্ট যে, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি আমার দৃষ্টিতে, কমিশনের দৃষ্টিতে শান্তিপূর্ণ আছে। উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো এখানে কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি এবং কমিশনও তেমনটা মনে করছে না।নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পর্কে ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচনের উপকরণ সংগ্রহের কার্যক্রম শেষের দিকে। শিগগিরই এসব জেলা পর্যায়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে কিছু উপকরণ ভোটের আগের দিন, কিছু ভোটের দিন সকালে নির্ধারিত কেন্দ্রগুলোয় পাঠানো হবে।কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৩ ধরনের নির্বাচনী উপকরণ কিনতে হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যালট বাক্স, ব্যালট বাক্সের ঢাকনা ও লক, অমোচনীয় কালি, বিভিন্ন ধরনের সিল, স্ট্যাম্প, বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, কাগজ, প্যাড, রশি প্রভৃতি। এসব উপকরণের সিংহভাগ কেনা শেষ হয়েছে। এখন সেগুলো মাঠপর্যায়ে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। ইতোমধ্যে কোন জেলায় কি পরিমাণ উপকরণ প্রয়োজন, তা জানতে জেলা কর্মকর্তাদের ভোটকেন্দ্র ও কক্ষের সংখ্যা আগামীকালের (১৯ অক্টোবর) মধ্যে জানাতে বলেছে ইসি।

জানা গেছে, নির্বাচনে প্রতিটি ভোটকক্ষের জন্য একটি করে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স প্রয়োজন হয়। প্রতি কেন্দ্রে একটি করে দেওয়া হয় অতিরিক্ত ব্যালট বাক্স। সেই হিসাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে তিন লাখেরও বেশি স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স প্রয়োজন হবে। কমিশনের কাছে এখন বেশকিছু ব্যালট বাক্স আছে। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে প্রায় ৮০ হাজারের মতো নতুন ব্যালট বাক্স কেনা হচ্ছে। এবারই প্রথম দেশীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ব্যালট বাক্স কেনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সেগুলো ইসিতে পৌঁছে দেওয়া শুরু হয়েছে।ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানিয়েছেন, কেনাকাটা চলছে। অনেক মালামাল পেয়েও গেছি। হুসিয়ান ব্যাগ, সিল, গালা, ব্যালট বাক্সসহ সবই পেয়েছি। কেনাকাটার ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশেরও বেশি অগ্রগতি হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে মাঠপর্যায়ে এসব পাঠানো হতে পারে।ব্যালট পেপার প্রসঙ্গে অতিরিক্ত সচিব বলেন, ব্যালট পেপার আমরা বাংলাদেশ সরকারি মুদ্রণালয় (বিজি প্রেস) থেকে ছাপাব। এ ছাড়া মনোনয়নপত্রসহ অন্যান্য মুদ্রণের কাজও করা হবে। এ জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। সংসদ নির্বাচনের কার্যক্রম সব দিক থেকে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।ইসির নির্বাচনী প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও চলছে পুরোদমে। ইতোমধ্যে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, সিনিয়র জেলা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও বিভাগীয় কমিশনারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে ২৮ ও ২৯ অক্টোবর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ ছাড়া ভোটগ্রহণের এক সপ্তাহ আগে ১০ লাখের মতো ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

এদিকে আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ কার্যালয়গুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। এক্ষেত্রে সব আঞ্চলিক, জেলা ও উপজেলা বা থানা নির্বাচন কার্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বলেছে সংস্থাটি। ইসির সেবা শাখা থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে পাঠানো হয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মাঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে ইসির কাছে কার্যালয়গুলোর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তুলে ধরা হয়। আলোচনার পর ওই বৈঠকেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসককে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। জননিরাপত্তা বিভাগে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে ভোটার তালিকা, ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপার ও বিভিন্ন প্রকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী মালামাল নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের মাঠপর্যায়ের ১০টি আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস, প্রতিটি জেলা নির্বাচন অফিস, প্রত্যেক উপজেলা নির্বাচন অফিস এবং মেট্রোপলিটন এলাকায় থানা নির্বাচন অফিসে সংরক্ষণ করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে এসব অফিসের নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়তে পারে মর্মে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জনস্বার্থে ও আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দিয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের মাঠপর্যায়ের এ অফিসসমূহের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের মাঠপর্যায়ের প্রতিটি কার্যালয়, বিশেষ করে আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস, জেলা নির্বাচন অফিস, উপজেলা নির্বাচন অফিস ও থানা নির্বাচন অফিসসমূহের এখন থেকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে ইসি।