রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে দু জন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যকে হাতের ইশারায় গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায়। যেটা গত এক সপ্তাহ ঢাকার রাজপথে দেখা যায়নি। কাকরাইলের মতোই রাজধানীর অধিকাংশ সড়কে গতকাল ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা কাজে ফিরেছেন। এতে স্বস্তি ফিরেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। এদিন শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের ফুল দিয়ে বরণ এবং অভিনন্দন জানাতেও দেখা গেছে। তাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এদিনও দায়িত্ব পালন করেছেন আনসার সদস্য এবং শিক্ষার্থীরা। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সদরদপ্তরের প্রধান ফটকের সামনেও ফুল দিয়ে পুলিশ সদস্যদের বরণ করে নেন শিক্ষার্থীরা।গতকাল রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব গ্রহণের পর গত কয়েক দিনের তুলনায় যানজট নিয়ন্ত্রণে ছিল। রাজধানীর পল্টন, কাকরাইল, মতিঝিল, রামপুরা, ধানমন্ডি, সোনারগাঁও ও বিজয় সরণি এলাকায় ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। তবে এদিন কোনো ধরনের মামলা করেনি ট্রাফিক পুলিশ। আনসার সদস্য ও শিক্ষার্থীরা বলেছেন, এতদিন তাদের কাছে কোনো বেতার যন্ত্র বা ওয়্যারলেস না থাকায় শুধু নিজ মোড়ের অবস্থা ছাড়া অন্যান্য স্থানের অবস্থা জানতে পারতেন না। এতে রাস্তায় যানজট বেশি ছিল। পুলিশ দায়িত্বে ফেরায় সেটা হচ্ছে না।ঢাকা শহরে সাড়ে তিন শতাধিক ট্রাফিক স্পট রয়েছে। এর মধ্যে শতাধিক স্পটকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। এই বিভাগে আট উপকমিশনারসহ সাড়ে ৩ হাজার সদস্য কর্মরত রয়েছেন। গতকাল গুরুত্বপূর্ণ শতাধিক স্পটে দায়িত্ব পালন করেছেন ট্রাফিক সদস্যরা। এ ছাড়া অন্যান্য স্পটেও তারা তিন শিফটে দায়িত্ব পালন করেন। সকালে রমনা এলাকার বিভিন্ন স্পটে
ছাত্রদল নেতাদের দেখা যায় পুলিশকে ফুল দিয়ে বরণ করে নিতে। অফিসার্স ক্লাবের সামনের সিগন্যালে রমনা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি আরিফুল ইসলামের ছেলে তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ছাত্রদল নেতাকর্মী পুলিশকে ফুল দিয়ে বরণ করে কুশল বিনিময় করতে দেখা গেছে।এক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বলেন, দায়িত্বে ফেরার আগে নিজের মধ্যে অনেক জড়তা ও ভয় কাজ করছিল। গত কয়েক দিন পুলিশের সঙ্গে যেটা হয়েছে, তা বর্ণনা করার মতো না। রাস্তায় দায়িত্ব পালন করতে আসার সময়ও পরিবারের সদস্যরা ভয় পাচ্ছিলেন। অনেকবার বাসা থেকে ফোন করে কী অবস্থা জানতে চাওয়া হয়েছে। কিন্তু রাস্তায় আসার পর দেখেছি, সাধারণ মানুষ আমাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নিচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা কাজে সহযোগিতার পাশাপাশি শ্রদ্ধা করছেন। এটা খুবই ভালো লাগল।আরেক পুলিশ সদস্য বলেন, দায়িত্বে ফেরার আগে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আইস ব্রেকিং দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সেখানে স্পষ্টভাবে তারা বলেছেন, রাস্তায় কারও সঙ্গে কোনো ধরনের তর্কে জড়ানো যাবে না। ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে।
এদিকে শিক্ষার্থীরা ট্রাফিকিংয়ের ভূমিকা রাখায় খুশি পুলিশ সদস্যরা। তারা বলছেন, শিক্ষার্থীরা আইন প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেননি। পুলিশ এটা করতে পারলে ঢাকার রাস্তায় যানজট আরও কমে আসা সম্ভব। শিক্ষার্থীরা কোনো ভিআইপির গাড়ি ধরলেও কিন্তু ফোন আসেনি। কিন্তু পুলিশ গাড়ি আটকালেই ফোন আসে বিভিন্ন জায়গা থেকে। শিক্ষার্থীরা যেভাবে রাস্তায় থেকে ট্রাফিকিং করলেন, তাতে নতুন প্রজন্ম সচেতন হবে বলে মনে করছি।কাকরাইলে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে এক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বলেন, গত সোমবার আওয়ামী লীগ পার্টি অফিসের সামনে দায়িত্ব ছিল। দুপুরের পর যখন অবস্থা পরিবর্তনের খবর শোনা যায়, তখন পুরো ফোর্স কন্টোল রুমে চলে আসি। তার পর আর কোথাও দায়িত্ব ছিল না। আমি রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের ব্যারাকে থাকি। সেদিন থেকে আজ (সোমবার) পর্যন্ত সেখানেই ছিলাম, বাইরে বের হইনি।কারওয়ান বাজার ট্রাফিক জোনের সহকারী কমিশনার স্নেহশীষ কুমার দাস বলেন, ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ভয় ও জড়তা থাকলেও দায়িত্ব পালন করতে এসে ফোর্সের মনোবল বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণ মানুষ আমাদের অভিনন্দন জানিয়ে ফুল দিয়ে বরণ করে নিয়েছেন। এটা খুবই ভালো বিষয়। পথচারীরা সহযোগিতা করেছেন, অনেকে পানি পান করতে দিয়েছেন।ট্রাফিক পুলিশদের কাজে ফেরার বিষয়ে ডিএমপি অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মুনিবুর রহমান বলেন, কয়েক দিন ধরে ট্রাফিক সদস্যদের নার্সিং করা হয়েছে। রাস্তায় দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে তাদের সব ধরনের ঝুঁকির কথা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। একটা ছন্দ পতন হয়েছিল। তবে এখন আবার সব স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের দায়িত্বে পাঠানোর আগে মোড়ে মোড়ে দায়িত্ব পালন করা শিক্ষার্থী, স্থানীয় জনতা ও আনসারের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। এ সপ্তাহের মধ্যে ট্রাফিক পুলিশের সব সদস্য কর্মস্থলে যোগ দেবেন। তাদের একটা আইস ব্রেকিং হচ্ছে। রাজধানীর প্রায় সব স্থানে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।