নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশ ধরতে নেমেছেন জেলেরাএইচএসসির সোয়া ৪ লাখ খাতা চ্যালেঞ্জরোববার ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে নিম্নচাপ২০২৬ সাল থেকেই নতুন বেতন স্কেলে বেতন-ভাতা পেতে পারেন সরকারি চাকরিজীবীরাবাজারে কিছুটা স্বস্তি এনেছে শীতের সবজি, কমছে ডিমের দামও
No icon

সনদ বাস্তবায়নে সংসদকে বাধ্য করার উপায় পায়নি কমিশন

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে যে সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে, তার হাতে যেতে পারে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের দায়িত্ব। ৯ মাসের মধ্যে সনদ বাস্তবায়নের শর্ত দেওয়া হবে তাদের। কিন্তু পরিষদ শর্ত না মানলে কী হবে, তা ঠিক করতে পারেনি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ফলে গণভোটে সাংবিধানিক আদেশ অনুমোদিত হলেও জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি। বিশেষজ্ঞরা সনদ বাস্তবায়নে নির্দেশনামূলক পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু কমিশন বাধ্যতামূলক করতে চায়, তবে তার উপায় বের করতে পারেনি।গতকাল শনিবারও বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সঙ্গে বৈঠক করেছে কমিশন। আগামী সংসদের কাঠামো এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক, নাকি নির্দেশনামূলক হবে এ বিতর্কে আলোচনা ঘুরপাক খাচ্ছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংস্কার) আদেশে ৯ মাসের মধ্যে সনদ বাস্তবায়ন নির্দেশনামূলক রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাধ্যতামূলক করার কোনো না কোনো পথ রাখা হবে, যা ঠিক হতে পারে আজ রোববারের বৈঠকে। সাংবিধানিক আদেশের কাঠামো তৈরি হয়েছে। আজ কমিশনের বৈঠকে প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ প্যানেলের মতামত নেওয়া হবে। এর মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে সাংবিধানিক আদেশের খসড়া। এরপর জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি সরকারকে সুপারিশ করবে কমিশন। সরকার সাংবিধানিক আদেশ জারি করবে। তাতে বলা থাকবে, গণভোট কবে হবে।জানতে চাইলে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ গতকাল সমকালকে বলেন, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। আদেশের কাঠামো অনেকটাই প্রস্তুত। শিগগির খসড়া চূড়ান্ত করা হবে।

সাংবিধানিক আদেশের নাম হবে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংস্কার) আদেশ-২০২৫ । গত কয়েক দিনের বৈঠকে এর যে কাঠামো তৈরি হয়েছে তা হলো জুলাই সনদ নয়, গণভোট হবে এ আদেশের ওপর। জনগণ অনুমোদন দিলে আগামী সংসদ দ্বৈত ভূমিকায় থাকবে। একই সঙ্গে সংসদ ও সংবিধান সংস্কার পরিষদের দায়িত্ব পালন করবে। সরকার গঠন ও আইন প্রণয়ন করবে সংসদ। আর পরিষদ ৯ মাসের মধ্যে সংবিধান সংশোধন, পরিমার্জন, পরিবর্তন করে জুলাই সনদে উল্লিখিত সংস্কারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে। গণভোটে প্রাপ্ত কন্সটিটুয়েন্ট পাওয়ারে (গাঠনিক ক্ষমতা) সংবিধানের মৌলিক কাঠামো বদল করতে পারবে।গতকাল সকালে সংসদে এনসিপির সঙ্গে বৈঠক করে ঐকমত্য কমিশন। এর পর দুপুর থেকে চার ঘণ্টা বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সঙ্গে বৈঠক করে। জুলাই সনদে সই না করা এনসিপির দাবি, সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোটের মাধ্যমে আগামী সংসদের জন্য জুলাই সনদ বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক করতে হবে। তবেই তারা সনদে সই করবে।

কমিশনের এক সদস্য বলেন, বৈঠকে এনসিপির প্রতিনিধিরা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, তারা সনদে সই করতে চান। তবে কিছু প্রস্তাবের বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছেন। সেগুলো বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য। এনসিপির প্রস্তাবে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটি দিকই আছে। সেগুলো বিবেচনা করে এগোচ্ছি। মূল লক্ষ্য, সব দল যেন সনদে সই করে।সংসদকে বাধ্য করতে তিন বাধা কমিশন ও বিশেষজ্ঞ প্যানেলের দুই সদস্য বলেন, নির্ধারিত ৯ মাসের মধ্যে সনদ অনুযায়ী সংবিধান সংস্কার না করলে কী হবে এ-সংক্রান্ত তিনটি বিকল্প নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। প্রথম বিকল্প ৯ মাসের মধ্যে ব্যর্থ হলে সাংবিধানিক সংস্কার পরিষদ ও সংসদ বিলুপ্ত হবে। নতুন নির্বাচনে নতুন করে পরিষদ গঠিত হবে। কিন্তু এতে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংকটের আশঙ্কা রয়েছে। আইনিভাবে এ প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য হলেও রাজনৈতিকভাবে নয়। কারণ, সংস্কার না করার কারণে ৯ মাস পর সংসদ বিলুপ্ত হলে পরের নির্বাচন কার অধীনে হবে, এর জবাব মিলছে না।

দ্বিতীয় বিকল্প ৯ মাসের মধ্যে সংস্কার না করলে জুলাই সনদ অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধান সংশোধন হয়ে যাবে। এ প্রস্তাবও বাতিল হয়েছে আলোচনায়। কমিশনের এক সদস্য  বলেন, সনদে সংস্কারের প্রথম সিদ্ধান্ত ভাষা-সংক্রান্ত। এতে বলা হয়েছে, বাংলা হবে রাষ্ট্রভাষা। নাগরিকদের অন্যান্য মাতৃভাষাও স্বীকৃতি পাবে। সনদে বলা হয়নি, কোন কোন ভাষা স্বীকৃতি পাবে। বিষয়টি নির্ধারণ করবে সংবিধান সংস্কার পরিষদ। জুলাই সনদ সংবিধান সংশোধনের বিল নয়, ফলে ৯ মাস পার হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধান সংস্কার সম্ভব নয়। এখনও কোনো সংস্কার বিল খসড়া করা হয়নি। কাজটি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের, যারা পরিষদ বা সংসদে বসে বিতর্কের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেবেন।