
গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিসের নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সে ইসরায়েলি বিমান হামলায় পাঁচ সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন। নিহত সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছেন রয়টার্সের ভিডিও সাংবাদিক হুসাম আল-মাসরি, আলজাজিরার ক্যামেরাপারসন মোহাম্মদ সালামা, এপির ফ্রিল্যান্স নারী সাংবাদিক মারিয়াম আবু দাগা, মিডল ইস্ট আইয়ের সাংবাদিক আহমদ আবু আজিজ এবং মোয়াজ আবু তাহা।হাসপাতালের চিকিৎসকদের বরাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, হামলায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৫০ জন। যাদের মধ্যে অনেকেই গুরুতর অসুস্থ রোগী, যারা ইতোমধ্যে হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সংস্থাটির প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস বলেন, গাজার মানুষ যখন অনাহারে দিন কাটাচ্ছে, তখন তাদের সীমিত স্বাস্থ্যসেবার সুযোগও ধ্বংস করা হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হামলা বন্ধ ও অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।ইসরায়েলের এই হামলাকে ডাবল-ট্যাপ আক্রমণ বলে বর্ণনা করেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। প্রথমে হাসপাতালটির ছাদে অবস্থান করা সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে বোমাবর্ষণ করা হয়। এর পর তাদের সাহায্য করতে ঘটনাস্থলে ছুটে যাওয়া সাংবাদিক, উদ্ধারকর্মী ও চিকিৎসকদের ওপর কয়েক মিনিটের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় হামলা চালানো হয়। আল-হক নামে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক একটি মানবাধিকার সংস্থা এই হামলা কৌশলকে স্পষ্ট গণহত্যামূলক কাজ হিসেবে অভিহিত করেছে।
হামলার পরপরই কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকর্মীদের সংগঠন ফরেন প্রেস অ্যাসোসিয়েশন। নৃশংস এই হামলার ঘটনায় আশ্চর্য ও ক্ষোভ প্রকাশ করে ইসরায়েলের কাছে অবিলম্বে ব্যাখ্যা চেয়েছে তারা। সংগঠনটি বলেছে, এখনই সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু বানানোর ন্যক্কারজনক প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে।টেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি একে ভয়াবহ হামলা আখ্যা দিয়ে বলেছেন, সাধারণ মানুষ, স্বাস্থ্যকর্মী ও সাংবাদিকদের অবশ্যই সুরক্ষা দিতে হবে। আমরা গাজায় এখনই যুদ্ধবিরতি চাই। হাসপাতালটির এক চিকিৎসা কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, হামলার সময় তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিলেন। হঠাৎ বিস্ফোরণে পাশের অপারেশন থিয়েটার ধসে পড়ে। তিনি বলেন, প্রতিটি করিডোর, প্রতিটি ফ্লোরে রোগীর ভিড় ছিল। হামলার পর রক্তে ভেজা মেঝে আর বিশৃঙ্খলার দৃশ্য চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না।এই হামলার আগে গাজার বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি হামলায় এক দিনে ৫১ ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার তথ্য জানিয়েছিল কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। যাদের মধ্যে মানবিক সহায়তা নিতে গিয়ে প্রাণ গেছে ২৪ জনের। অনাহার ও অপুষ্টিতে মৃত্যু হয়েছে আরও আট জনের। এ ছাড়া গত ২০ দিনের মধ্যে গাজায় এক হাজারের বেশি ভবন ইসরায়েল ধ্বংস করেছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স।গাজায় এখন পর্যন্ত ৬২ হাজার ৭৪৪ জন নিহত এবং এক লাখ ৫৮ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। এ ছাড়া ২২ মাসের এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১৯০ জনের বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সাংবাদিকদের সুরক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)।এদিকে অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞে ক্ষোভ জানিয়েছেন আয়ারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট মাইকেল ডি. হিগিন্স। তিনি বলেছেন, গাজার পরিস্থিতি এখন এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছে, যেখানে কোনো জবাবদিহি নেই। আইরিশ টেলিভিশন আরটিই নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট হিগিন্স গাজার পরিস্থিতিকে বিশ্বের ইতিহাসের এক বেদনাদায়ক সময় বলেও উল্লেখ করেন।