
সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে ভোট চেয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ এ কথা জানান।তিনি বলেন, নির্বাচনে সন্ত্রাস-অনিয়ম বন্ধ করতে হলে পিআর পদ্ধতিতে ভোট করতে হবে। সবাই সবকিছু না-ও চাইতে পারে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারও অনেকে চায়নি। জনগণ চাইলে অবশ্যই পিআর পদ্ধতি মানতে হবে। এই দাবি নিয়ে মাঠে থাকবে জামায়াত। পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও নেবে।পিআর ছাড়া জামায়াত নির্বাচনে যাবে কিনা এ প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে তিনি পিআর পদ্ধতির প্রশংসা করেন। হামিদুর রহমান আযাদ জানান, নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে সবসময় তারা আন্তরিক ছিলেন। জামায়াত মনে করে, পিআর পদ্ধতি দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহায়ক হবে। এটা একটা শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি, যেটাতে ভোটারদের যথাযথ মূল্যায়ন হবে।
সিইসির কাছে এখন পর্যন্ত নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার সমান সুযোগ) নিশ্চিত হয়নি দাবি করে এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, নির্বাচনের জন্য এখনও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আসেনি। সে কারণে আমরা অন্যান্য দাবির সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) এটা জোরালোভাবে বলছি নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে, যেটা এখনও অনুপস্থিত।লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে জামায়াতের এ উদ্বেগ নিরসনে কাজ করা হচ্ছে বলে নির্বাচন কমিশন আশ্বস্ত করেছে এমনটাও জানান তিনি।ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে হলে কী চ্যালেঞ্জ দেখছে জামায়াতে ইসলামী সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হওয়ার জন্য তাদের কোনো সমস্যা নেই। জামায়াতের পক্ষ থেকে এই দাবি করা হয়েছিল ফেব্রুয়ারি অথবা এপ্রিলে নির্বাচনের সময়সূচি দেওয়ার জন্য। তাঁর দাবি, তারা এখানে সরকারকে বাধ্য করেননি। চলতি বছরের ডিসেম্বরেও যদি নির্বাচন হয়, তাতেও জামায়াতের কোনো আপত্তি নেই।
জামায়াতের এ নেতা বলেন, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ বিষয়ে সবার বক্তব্য আমলে নিতে সিইসিকে আহ্বান জানিয়েছে জামায়াত। নিজের আসন ছাড়া আর কোনো আসনে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবে আমরা কথা বলেছি।তিনি বলেন, জামায়াত গ্রহণযোগ্য সব নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে। সে হিসেবে জামায়াত তিনশ আসনে প্রার্থী দিয়ে মাঠে-ময়দানে জনগণের কাছে যাচ্ছে। জনমত গঠনের কাজ করছে।দলের আয়-ব্যয়ের হিসাবের সঙ্গে ব্যাংক একাউন্ট ও এর নম্বর উল্লেখ না থাকা এবং সেটা দিতে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যাংক একাউন্টের ভিত্তিতে ২০০৮ সালে রিটার্ন দাখিল করা হয়েছে। কিন্তু এর পর দেশে কী হয়েছে, সেটা সবাই জানেন। ব্যাখ্যার দরকার নেই।তিনি বলেন, গত ১৫ বছর আমরা বাড়িঘরে থাকতে পারিনি। ব্যাংক একাউন্ট খুলতে যাব কখন? হ্যাঁ, ব্যাংকে যদি যেতাম আয়নাঘরে ঢুকতে হতো। তখন আয়নাঘরে ঢোকা থেকে মানুষকে গুম-খুন-ক্রসফায়ারের সম্মুখীন হতে হয়েছে। সে কারণে এবার রিটার্ন দাখিলের সময় ব্যাংক হিসাবের উল্লেখ করা যায়নি। সামনে পরিবেশ অনুকূল থাকলে আগামী রিটার্নের সময় অবশ্যই আমরা এটা করব।এর আগে হামিদুর রহমান আযাদের নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি দল সিইসির সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক করে। প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য জসিম উদ্দিন সরকার এবং নায়েবে আমির ঢাকা মহানগর উত্তর ও কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুর রহমান মূসাসহ পাঁচজন সদস্য।