মহাকালের আবর্তে বিলীন হয়ে গেছে খ্রিস্টীয় বছর ২০২৪। গতকাল ১২টা ১ মিনিট থেকেই শুরু হয়েছে নতুন বছর ২০২৫। বাংলাদেশের জন্য বিদায়ি ও নতুন দুটি বছরই গুরুত্বপূর্ণ। হাজারো প্রাণের বিনিময়ে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্রের পথে রাষ্ট্র সংস্কারের মাধ্যমে উদার, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশা জাগিয়ে গেছে ২০২৪।সেই প্রত্যাশা পূরণ কতটা সম্ভব হচ্ছে, নতুন এই বছরে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তবে নতুন বছর মানেই সবার প্রাণে নতুন স্পন্দন, নতুন আশা, নতুন সম্ভাবনা। বিগত বছরের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা পেছনে ফেলে অমিত সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাওয়া।নতুন এই বছর উপলক্ষে দেশবাসী, প্রবাসী বাংলাদেশিসহ বিশ্ববাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।এ উপলক্ষে এক বাণীতে তিনি বলেন, নতুনের আগমনী বার্তা আমাদের উদ্বেলিত করে, নব উদ্যমে সুন্দর আগামীর পথচলার জন্য অনুপ্রেরণা জোগায়। নতুন বছরের এই মাহেন্দ্রক্ষণে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে নতুন সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে উন্নতির নতুন শিখরে আরোহণে অঙ্গীকারবদ্ধ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার লাখো শহীদের রক্ত এবং গত জুলাই-আগস্ট মাসে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে অর্জিত স্বাধীনতাকে সর্বদা সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার করছে। আমরা দেশকে ভালোবাসব, দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে সর্বশক্তি নিয়োগ করব এবং যেকোনো সন্ত্রাসবাদকে প্রতিহত করব।নতুন বছরে মানুষে-মানুষে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আরো জোরদার হোক এই কামনা করে তিনি বলেন, খ্রিস্টীয় নতুন বছর ২০২৫ সবার জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি।নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহেই রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়া শুরু করবে। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ৩ জানুয়ারি এবং সংবিধান ও দুদক সংস্কার কমিশন ৭ জানুয়ারি তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে পারে। অন্য কমিশনগুলোও জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে। প্রধান উপদেষ্টা আগেই জানিয়ে রেখেছেন, প্রথম গঠিত ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদন পাওয়ার পর ওই ছয় কমিশনের প্রধানদের নিয়ে গঠন করা হবে জাতীয় সংস্কার কমিশন।
এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা হতে পারে। গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন এবং বিডিআর বিদ্রোহের নামে পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পুনঃ তদন্তে স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন এ বছর অন্যতম আলোচনার বিষয় হয়ে উঠতে পারে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা আজীবন নির্বাচনে অযোগ্য হতে পারেন বলে বিদায়ি বছরের শেষের দিকে আভাস মিলেছে। অন্তর্বর্তী সরকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রস্তুত ও প্রকাশের দায়িত্ব নিয়েছে। তাতে কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে এবং প্রভাব সৃষ্টি হতে পারে তা নতুন এ বছরেই জানা যাবে। একই সঙ্গে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে নির্বাচন কমিশন আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা প্রস্তুত করতে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি ২০২৫ সালে বাংলাদেশ নির্বাচনী রাজনীতিতে সরগরম থাকতে পারে।