ফের আলোচনায় আসছে প্রাথমিক শিক্ষাস্তর অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত করার উদ্যোগ। ১৩ বছর আগে এমন উদ্যোগ নেওয়া হলেও অবকাঠামো, শিক্ষক, প্রশাসন, পাঠ্যক্রম, বিধিসহ নানা কারণে সেটি বাস্তাবায়ন হয়নি। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুযায়ী, ২০১৮ সালের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষাস্তর অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত করার কথা থাকলেও পাইলটিংয়ের পর তা আলোর মুখ দেখেনি। এর পর কেটে যায় আরও পাঁচ বছর। ফলে ১৩ বছরেও এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রণয়ন করতে পারেনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী, শিক্ষার স্তর হবে তিনটি। সেগুলো হচ্ছে- প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক, নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মাধ্যমিক এবং এর পর উচ্চশিক্ষা স্তর। বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত নিম্ন মাধ্যমিক, নবম-দশম শ্রেণি মাধ্যমিক, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি উচ্চমাধ্যমিক এবং তার পরে শুরু উচ্চশিক্ষা।কাজীর গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই - এ কথার মিল পাওয়া যায়, জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত করার উদ্যোগে। কেবল মৌখিক ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন। বলতে গেলে, প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত করার কার্যক্রম লেজেগোবরে অবস্থা। এ নিয়ে ১৩ বছর ধরে রশি টানাটানি চলছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে। এর মধ্যে আবার আলোচনায় আসছে উদ্যোগটি।
এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব আমাদের সময়কে জানান, ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির বৈঠক হয়েছে। দুই মন্ত্রণালয়ের কাজ হস্তান্তরের কর্মপরিকল্পনা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।যেসব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো রয়েছে, সেসব বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে। গত ৩০ এপ্রিল প্রাথমিকের সব আঞ্চলিক উপপরিচালক ও জেলা শিক্ষা অফিসারদের কাছ থেকে বিদ্যালয়ের তালিকা চাওয়া হয়েছে। যেসব বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালু করা যাবে, সেসব বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক সংখ্যাও জানতে চেয়েছে অধিদপ্তর।এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক করতে ৬৯৬টি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি চলমান রয়েছে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালু করতে হলে অবকাঠামো থাকতে হবে। আমাদের শিক্ষক রয়েছে, তবে তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। আগামী ৫ মে আমাদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এর পর বিস্তারিত জানাতে পারব।
তবে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে বলে মনে করেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ইমেরিটাস ও প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ মনজুর আহমেদ। তিনি বলেন, বড় বিষয় হচ্ছে- ব্যবস্থাপনা কী হবে? কীভাবে চালানো হবে শিক্ষা প্রশাসন। বর্তমানে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যেখানে নবম-দশম শ্রেণিও আছে। একটি স্কুলকে দুই মন্ত্রণালয় ও দুই অধিদপ্তরে ছোটাছুটি করতে হবে। এমনিতেই তাদের হয়রানির শেষ নেই, আছে শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষ সংকট। এ অবস্থায় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কীভাবে চলবে? শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কীভাবে চলবে? প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের ইনস্ট্রাক্টররা কি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেবেন? টিচার ট্রেনিং কলেজগুলো তা হলে শুধু নবম ও দশম শ্রেণিতে যারা পড়ান, তাদের প্রশিক্ষণ দেবে? এ বিষয়গুলোর সুরাহা হওয়া দরকার।