
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে দুটি নতুন বিভাগ রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ গঠনের অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে দেশজুড়ে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কলম বিরতিতে রয়েছেন। এর ফলে রাজস্ব আহরণ কার্যক্রমে মারাত্মক স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। সেবা না পেয়ে ফিরে গেছেন অসংখ্য করদাতা ও সেবাগ্রহীতা।কলম বিরতির প্রথম দিন গতকাল বুধবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দেশের সব কর অঞ্চল, কাস্টম হাউস, শুল্ক স্টেশন ও ভ্যাট কমিশনারেট অফিসে কর্মবিরতি পালিত হয়। আজ বৃহস্পতিবার ও আগামী শনিবার (১৭ মে) সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত কলম বিরতি চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন কর্মকর্তারা।গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআরের প্রধান কার্যালয় ছিল অনেকটাই ফাঁকা। কলম বিরতির সময়কালে কর্মকর্তারা অফিসে উপস্থিত থাকলেও কোনো সেবা কার্যক্রমে অংশ নেননি। রুমগুলোর সামনে কলম বিরতির সাইনবোর্ড টানানো ছিল। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে তিন দিনের কর্মসূচি লেখা থাকার পাশাপাশি করদাতাদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। রাজধানীর কর অফিসগুলোতেও একই অবস্থা বিরাজ করেছে। একজন করদাতা জানান, তিনি কর-সংশ্লিষ্ট একটি জটিলতার সমাধান পেতে আগারগাঁওয়ে এসেছিলেন। কিন্তু কর্মকর্তারা তাকে জানান, আন্দোলন চলমান থাকায় কোনো কাগজপত্র গ্রহণ বা কাজ লিপিবদ্ধ করা সম্ভব নয়।
আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া কর্মকর্তারা বলছেন, ১২ মে রাতে অধ্যাদেশটি হঠাৎ করে গোপনে জারি করা হয়। এই অধ্যাদেশের আগে গঠিত পরামর্শক কমিটির সুপারিশ অবজ্ঞা করা হয়েছে এবং স্টেকহোল্ডারদের কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। তারা দাবি করছেন, পরামর্শক কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া উচিত। অবিলম্বে এই অধ্যাদেশ বাতিল না হলে তাদের কলম বিরতি চলবে এবং ভবিষ্যতে আরও কঠোর আন্দোলন করা হবে বলেও জানান তারা।গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, রাজস্ব নীতি ও আহরণ ব্যবস্থাপনায় শীর্ষপদে মাঠপর্যায় থেকে উঠে আসা কর্মকর্তাদের প্রাধিকার দেওয়া উচিত। তারা বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন। নতুন আত্তীকরণে আশঙ্কা থাকে যে, যদি ঠিকমতো সমন্বয় হতে সময় লাগে, তা হলে মাঠপর্যায় থেকে কর আদায় এবং জাতীয় পর্যায়ে কর পরিস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শ্লথ হতে পারে।
এদিকে কলম বিরতির পাশাপাশি আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে কর্মকর্তাদের পদত্যাগের মাধ্যমে। বিসিএস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশন ও বিসিএস কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি, মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব ও ট্রেজারারসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য গণপদত্যাগ করেছেন।সংগঠনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত কমিশনার (কাস্টমস ও ভ্যাট) সাধন কুমার কু-ুু জানান, সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সোমবার অধ্যাদেশটি জারি হলেও এতে পরামর্শক কমিটির দেওয়া প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি, স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে হয়নি কোনো আলোচনা। এভাবে গোপনে অধ্যাদেশ জারি করায় তারা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন এবং তা বাতিলের দাবি করছেন। আন্দোলনকারীরা জানান, তারা সরকারের সংস্কারে আস্থা রাখলেও এই অধ্যাদেশে ট্যাক্স ও কাস্টমস ক্যাডারের নীতিনির্ধারণী ভূমিকাকে উপেক্ষা করা হয়েছে। ফলে তাদের কার্যকর অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। এই অধ্যাদেশে এনবিআর বিলুপ্ত হয়ে রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়েছে, যা এনবিআরের আওতায় থাকা কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।