ইসরায়েলি সেনা ক্যাম্পে ড্রোন হামলা, নিহত ৪ফিলিং স্টেশনে বাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, নিহত ৩এইচএসসির ফল মঙ্গলবারডেঙ্গুতে এক দিনে রেকর্ড মৃত্যু নয়জনেরএবার বিমানে পেজার ও ওয়াকিটকি নিষিদ্ধ করল ইরান
No icon

যাত্রীসেবায় ১০ বছরের ভ্যাট অব্যাহতি চায় মেট্রোরেল

মেট্রোরেলের যাত্রীসেবায় আগামী ১০ বছরের জন্য মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট অব্যাহতি চেয়েছে কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি এ ভ্যাট অব্যাহতি চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে মেট্রোরেল নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। মেট্রোরেলের সেবার ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন ডিএমটিসিএল বলছে, সেবা গ্রহণকারী হিসেবে এই ভ্যাটের বোঝা মেট্রোরেলে যাতায়াতকারী যাত্রীদের ওপর বর্তাবে। এ নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব দেখা গেছে। তাছাড়া বর্তমানে বিনা ভাড়ায় যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, শিশুরা বিনা ভাড়ায় অভিভাবকের সঙ্গে মেট্রোরেলে ভ্রমণ করতে পারেন। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি ভাড়ার ওপর ১৫ শতাংশ ছাড় পাচ্ছেন। এ ছাড়া এমআরটি বা র;্যাপিড পাস ব্যবহারকারীরা ১০ শতাংশ ছাড়ে মেট্রোরেল ভ্রমণ করতে পারেন। মেট্রোরেল যানজট নিরসন ও কর্মঘণ্টা সাশ্রয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে মেট্রোরেল প্রায় ২৫ বছর ধরে পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে রয়েছে। তবে এখনও সম্প্রসারণ কাজ অব্যাহত থাকায় সেখানে মেট্রোরেল সেবার ওপর কোনো ভ্যাট নেই।ডিএমটিসিএলের চিঠিতে বলা হয়, মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর বিদ্যুতের দাম চারবার বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে মেট্রোরেলে বিদ্যুৎ বিল বাবদ মাসে প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয় হয়। ক্লিয়ারিং হাউস সার্ভিস ফি বাবদ এমআরটি পাস ব্যবহারের ওপর ৩ শতাংশ ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষকে দিতে হয়। কিন্তু জনসাধারণের সুবিধার্থে মেট্রোরেলের ভাড়া এখনও বাড়ানো হয়নি। তাই এসব দিক বিবেচনায় নিলে ভ্যাট আরোপ করা যৌক্তিক হবে না।

ডিএমটিসিএল আরও বলেছে, শুধু ভাড়ার আয় দিয়ে লাভজনকভাবে মেট্রোরেল পরিচালনা করা যায় না। মেট্রোরেল পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলো ভাড়া থেকে সর্বোচ্চ ৬৫ শতাংশ আয় করে। বাকি ৩৫ শতাংশ আয় সরকার ভর্তুকি হিসেবে দিয়ে থাকে। সরকার মেট্রোরেলের ভাড়া জনসাধারণের সাধ্যের মধ্যে রেখেছে। ওই রুটে চলাচলকারী বাস ভাড়ার সঙ্গে যা সামঞ্জস্যপূর্ণ।জানা গেছে, মেট্রোরেল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গণপরিবহন বিবেচনায় বাংলাদেশ রেলওয়ের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সার্ভিসের মতো গত বছরের ২২ জানুয়ারি মেট্রোরেল সেবার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট বা মূসক আরোপ করা হয়। পরে মেট্রোরেলের যাত্রীদের কোনো ক্লাস বা শ্রেণিবিন্যাস না থাকায় মেট্রোরেলের সেবার ওপর কোনো ধরনের মূসক প্রযোজ্য নয় উল্লেখ করে গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা (দক্ষিণ) কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনারকে চিঠি দেয় ডিএমটিসিএল। এ প্রেক্ষাপটে এনবিআর চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত মেট্রোরেল সেবার ওপর মূসক অব্যাহতি প্রদান করে। এরপর মেট্রোরেলের সেবায় ভ্যাট আরোপ না করতে চলতি বছরের ১১ মার্চ এনবিআরে চিঠি দেয় ডিএমটিসিএল। কিন্তু কোনো আলোচনা না করেই গত ৪ এপ্রিল এনবিআর মূসক অব্যাহতির সুবিধা বাতিল করে আদেশ জারি করে। ফলে গত ১ জুলাই থেকে মেট্রোরেলের সেবার ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রযোজ্য হয়। সেবা গ্রহণকারী হিসেবে এই ভ্যাট যাত্রীদের পরিশোধ করতে হবে।

নানা যুক্তি তুলে ধরে মেট্রোরেল বলছে, এটি সম্পূর্ণ বিদ্যুৎচালিত বিধায় কোনো ধরনের জীবাশ্ম ও তরল জ্বালানি ব্যবহৃত হচ্ছে না। এমআরটি লাইন-৬ পরিপূর্ণভাবে চালু হলে এই রুটে সড়ক যানবাহনের সংখ্যা কমে যাবে। তাতে বছরে ২ লাখ ২৭শ টন কার্বন নিঃসরণ কমবে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট সড়কে যানবাহনের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। ফলে বায়ুদূষণও কমতে শুরু করেছে।চিঠিতে মেট্রোরেল জানিয়েছে, ঢাকা ম্যাস র;্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৬) এর ডিপিপির অ্যামোর্টাইজেশন শিডিউল এবং সরকার এবং জাইকার মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে মেট্রোরেলের পরিচালন ও সেবা শুরুর পর হতে পরবর্তী ১০ বছর পর্যন্ত ট্যাক্স হলিডে সুবিধা প্রদানের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।যাত্রীভাড়ার সঙ্গে ভ্যাট আদায় করতে হলে বিভিন্ন কারিগরি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে উল্লেখ করে মেট্রোরেল জানিয়েছে, বর্তমানে মেট্রোরেলের ১৬টি স্টেশনে মোট ৮৪টি স্বয়ংক্রিয় ভাড়া আদায় মেশিনের মাধ্যমে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। ভাড়ার সঙ্গে ১৫ শতাংশ মূসক যুক্ত হলে ভাঙতি টাকা সংগ্রহ ও ফেরত দেওয়া স্টেশনে স্থাপিত টিভিএম দ্বারা সম্ভব নয়। এসব মেশিন প্রতিস্থাপন ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। এ ছাড়া যাত্রী পরিবহন সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানে মূসক আরোপের ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন কর এবং সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২-তে মেট্রোরেলের বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই। তাই আইন সংশোধন না করে মূসক আরোপ করা আইনসম্মত হবে না।এ বিষয়ে ডিএমটিসিএলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন,ভ্যাট আরোপ হলে যাত্রীদের ভাড়া বাবদ ১৫ শতাংশ ব্যয় বাড়বে। যাত্রীদের ওপর যা অতিরিক্ত বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।