বেড়েছে AI কম্পিউটারের বাজারশিখা অনির্বাণে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধালেবাননে ইসরায়েলের ৮ শতাধিক সেনা নিহতদেশে গ্যাস উৎপাদন কমছেচালানোর সক্ষমতা নেই এমন কারখানা বন্ধ করা হবে
No icon

ধামাকা শপিংয়ে গ্রাহকের ৪৭০ কোটি টাকা হাওয়া

বিতর্কিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ধামাকা শপিংয়ের মালিকপক্ষ লক্ষাধিক ক্রেতা ও পণ্য সরবরাহকারীর ৪৭০ কোটি টাকা হাওয়া করে ফেলেছে। বিপুল অর্থের মধ্যে ১২৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম ডি জসিম উদ্দিন চিশতী, যিনি বর্তমানে পলাতক। ক্রেতা টানতে ব্যাপক ডিসকাউন্ট দেওয়ায় বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত কোম্পানির ৩২২ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। বাকি অর্থ অন্যান্য খাতে ব্যয় হয়েছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিশেষ তদন্তে ধামাকা শপিংয়ের এমন বেপরোয়া অনিয়ম উঠে এসেছে। গত বছরের ২৪ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংককে ৯টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা, ক্রেতা ও মার্চেন্টদের কাছে মোট দেনা, চলতি ও স্থায়ী মূলধনের পরিমাণ এবং এসব প্রতিষ্ঠান কোনো অর্থ অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে কিনা তা তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার অনুরোধ জানায়। এর অংশ হিসেবে গত বছরের ১৯ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫ সদস্যের একটি দল ধামাকা শপিংয়ের অনিয়ম তদন্ত করে। তদন্ত শেষে গত ২৭ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৪৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে।


কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে দেখা গেছে, গ্রাহকদের আগাম পরিশোধ করা অর্থ থেকে ৮৪ কোটি টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে সরিয়ে নিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জসিম উদ্দিন চিশতী। আর গ্রাহকদের পণ্য সরবরাহ না করে তার মালিকানাধীন অন্যান্য কোম্পানিকে ২৫ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। এ ছাড়া সফটওয়্যার কেনার নামে আরও ২০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধামাকার ক্রেতাদের আগাম পরিশোধ করা অর্থ লুটপাট করেছেন প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তা ও তাদের স্বজনরা। এ কাজে ধামাকা শপিংয়ের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) মো. সিরাজুল ইসলাম ও তার আপন ভাই মো. সেলিম হোসেনসহ আরও অনেকেই সম্পৃক্ত বলে ধারণা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা। এ ছাড়া মার্চেন্ট কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যোগসাজশ করে পণ্য সরবরাহ ছাড়াই শুধু কাগুজে লেনদেনের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার আশঙ্কার কথা উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে।বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, যেসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ক্রেতাদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে পণ্য দেয়নি এবং সরবরাহকারীদের কাছ থেকে পণ্য নিয়ে টাকা দেয়নি, তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষসহ সরকারের উচ্চমহল কাজ করছে। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের টাকা কীভাবে ফেরত দেওয়া যায়, তা নিয়েও কাজ হচ্ছে। আইন অনুযায়ী দোষীদের শাস্তির আওতায় এনে টাকা উদ্ধার করা হবে।


বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দল বলেছে, যেসব মার্চেন্ট প্রতিষ্ঠান ধামাকা শপিংকে পণ্য সরবরাহ করেছে তার মধ্যে দুটি কোম্পানির তথ্য বিশ্নেষণে দেখা গেছে, পণ্যের অর্ডার বাবদ ধামাকা শপিং থেকে পাওয়া অর্থের একটি বড় অংশ পণ্য সরবরাহের পরিবর্তে ওই দুই মার্চেন্ট নগদ ও চেকের মাধ্যমে ফেরত দিয়েছে। সেখানে ডিসকাউন্টের বাড়তি টাকা দিয়েছে। অর্থাৎ, কাগুজে ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে। কোনো পণ্য বিনিময় হয়নি। কিছুসংখ্যক গ্রাহক দফায় দফায় বিক্রেতা কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে নগদ ও চেকের মাধ্যমে অর্থ পেয়েছেন, যারা প্রাথমিকভাবে ধামাকা শপিংয়ের দেওয়া ডিসকাউন্ট সুবিধা ভোগ করেছেন। এই সুবিধাভোগীদের সঙ্গে ধামাকা শপিং বা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংশ্নিষ্টতার বিষয়ে আরও তদন্ত হওয়ার প্রয়োজন। সুবিধাভোগীদের আইনি প্রক্রিয়ায় আনা সম্ভব হলে আরও তথ্য পাওয়া যাবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই সুবিধাভোগী গ্রাহকদের একজন সেলিম হোসেন, যিনি কোম্পানির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলামের আপন ভাই।