করোনা অতিমারি অর্থনীতির নানা ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। করোনা সংক্রমণ শ্লথ হলে অর্থনীতির কোনো কোনো খাত ঘুরেও দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় ২০২২ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে অন্তত চারটি বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগোতে হবে। মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা এর মধ্যে অন্যতম। বাকি তিন চ্যালেঞ্জ হলো আন্তর্জাতিক বাজারে মুদ্রা বিনিময় হার, সরকারের ভর্তুকিসংক্রান্ত নীতিনির্ধারণ ও আর্থিক খাতে সংস্কার।অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এই চার খাতে যদি সঠিক নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে উঠে অর্থনীতি সচল রাখা যাবে। এর মধ্যে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে সামনের দিনগুলোতেও।বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫.০২ শতাংশ। পরের ছয় মাসে কখনো তা বেড়েছে, আবার কখনো কমেছে। তবে নতুন (২০২১-২২) অর্থবছরের প্রথম মাস থেকে মূল্যস্ফীতির গতি ঊর্ধ্বমুখী। জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫.৩৬ শতাংশ। সর্বশেষ নভেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৫.৯৮ শতাংশ।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী গতির পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। এর লাগাম টানা জরুরি। তা না হলে মানুষের জীবন-জীবিকায় বড় প্রভাব পড়বে। এ জন্য শুরুতে দরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ।এই অর্থনীতিবিদের সঙ্গে একমত পোষণ করেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির অন্যতম কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি। সহসা খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কমবে না। কারণ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চাহিদা কম, জোগান বেশি এমন পরিস্থিতি হয়নি। তবে এ অবস্থা খুব বেশি দিন থাকবে না বলেও তিনি মনে করেন।আবার রপ্তানি আয় নিয়ে আশার কথা শুনিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, করোনার ক্ষতি কত দিনে কাটিয়ে ওঠা যাবে তা বলা মুশকিল। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতির যে গতিবিধি, তা সন্তোষজনক; বিশেষ করে রপ্তানি আয়। তবে শুধু রপ্তানি আয় দিয়ে দেশের অর্থনীতি সচল রাখা যাবে না। এর জন্য সরকারকে নানামুখী পদক্ষেপ, বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের কাজগুলো করতে হবে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যমতে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বরে) এক লাখ ৬৮ হাজার ২১৫ কোটি টাকা পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪.২৯ শতাংশ বেশি। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে পণ্য রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৭৪৭ কোটি ডলার। অবশ্য শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩.২৭ শতাংশ রপ্তানি বেশি হয়েছে।মুদ্রানীতি ও ভর্তুকি নীতিমালার বিষয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই দুটি বিষয় আগামীর অর্থনীতির জন্য খুব জরুরি। সরকারকে এ নিয়ে ভেবেচিন্তে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ বিশ্ববাজারে ডলারের দাম বাড়ছে, টাকার মূল্য কমছে। সরকার ডিজেলের দাম বাড়িয়েছে। এরপর হয়তো সারের দাম, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব আসতে পারে। তাই সরকারকে এখন থেকে ভেবেচিন্তে ভর্তুকির সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পাশাপাশি তিনি আর্থিক খাতের সংস্কারের পরামর্শ দেন।