জামায়াতের সঙ্গে জোট করতে এনসিপির ১০০ নেতার সমর্থন পদ্মা সেতুতে সাড়ে তিন বছরে ২৯৩৬ কোটি টাকার টোল আদায়শীতে কাঁপছে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলরোববার সারাদেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে অবরোধের ডাক ইনকিলাব মঞ্চেরমনোনয়ন না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন বিএনপি নেতা
No icon

শীতে কাঁপছে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল

প্রচণ্ড শীতে কাঁপছে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলো। বিশেষ করে উত্তরের রংপুর, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, পঞ্চগড় ও নীলফামারীতে প্রচণ্ড ঠান্ডায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগব্যাধি। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও শ্রমজীবীরা ঠান্ডায় বেশি কষ্ট পাচ্ছেন। ঘন কুয়াশায় ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোতেও প্রচণ্ড ঠান্ডা পড়েছে। গতকাল শনিবার ভোর ৬টায় দেশের সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও নীলফামারী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে সামান্য বাড়তে পারে রাত ও দিনের তাপমাত্রা। তবে কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে অনেক জায়গায় ঠান্ডার অনুভূতি বজায় থাকতে পারে।
পাঁচ দিনের পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, মঙ্গল ও বুধবার মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকার কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। দেশের অন্যান্য এলাকায় হতে পারে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা। আগামী বুধবার পর্যন্ত সারাদেশে আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।

এদিকে গতকাল সকালে ঘন কুয়াশার কারণে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামতে না পেরে আটটি ফ্লাইট বিকল্প বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে। শাহজালাল বিমানবন্দরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এর মধ্যে তিনটি ফ্লাইট চট্টগ্রাম, চারটি কলকাতা এবং একটি ব্যাংকক বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে।

রংপুর

জারোতে (ঠান্ডায়) কোঁকড়া নাগি গেচু বাহে। সোজা হয়্যা খাড়ায় হবার পাওনা। বাড়ি থাকি না বেড়াইলে তো বউ-ছাওয়া নিয়া উপাস থাকা নাগে। কথা প্রসঙ্গে গতকাল শীতে এমন দুর্ভোগের কথা বলছিলেন রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের মটুকপুর চরের বাসিন্দা দিনমজুর ষাটোর্ধ্ব হাসেন আলী। গতকাল ভোরে ঘন কুয়াশাসহ কনকনে শীত উপেক্ষা করে প্রায় ২৫ কিলোমিটার বাইসাইকেল চালিয়ে রংপুর নগরীর শিমুলবাগ এলাকায় শ্রমিকের কাজ করতে আসেন তিনি। গায়ে হালকা জ্যাকেট, পায়ে স্পঞ্জ, পরনে লুঙ্গি আর মাথায় একটা মাফলার। ঠান্ডার কারণে বসতে পারছিলন না, দাঁড়িয়ে কাঁপছিলেন থরথর করে।শুধু হাসেন আলী নয়, তাঁর মতো অন্তত ৩০ দিনমজুর ঠান্ডা উপক্ষো করেই এদিন জড়ো হয়েছিলেন শিমুলবাগে। প্রত্যেকেই বলেন, প্রচণ্ড শীতে তাদের মতো শ্রমজীবীদের জীবনযাত্রা প্রায় অচল হয়ে পড়েছে।

গত কয়েক দিন ধরে কনকনে শীত আর ঘন কুয়াশায় রংপুর অঞ্চলের জনজীবন প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। কয়েক দিন ধরে এ অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৫ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। গতকাল রংপুরে দিনভর সূর্যের দেখা মেলেনি, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এই পরিস্থিতি আরও কয়েক দিন থাকতে পারে।

জয়পুরহাট ও আক্কেলপুর

এক সপ্তাহের মধ্যে গত শুক্রবার দুপুরে জয়পুরহাটে অল্প সময় রোদের দেখা মিললেও বিকেল থেকে হাড় কাঁপানো শীত আর সন্ধ্যার পর ঘন কুয়াশা সর্বত্র জেঁকে বসেছে। রাতে বৃষ্টির পানি মতো ঝরছে কুয়াশা। মহাসড়কে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে চলাচল করছে। তবে জীবিকার প্রয়োজনে বের হচ্ছেন শ্রমজীবী মানুষ। ঠান্ডার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতজনিত রোগ। হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। গতকাল সকাল ১০টা পর্যন্ত দেখা মেলেনি সূর্যের। এদিন ভোর ৬টায় জয়পুরহাটসহ পার্শ্ববর্তী নওগাঁর বদলগাছীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

গাইবান্ধা

ঘন কুয়াশা আর উত্তরের হিমেল বাতাসে কাঁপছে গাইবান্ধা। পৌষের শুরুতেই প্রচণ্ড শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তিন দিন ধরে জেলায় সূর্যের দেখা নেই। গতকাল সকালে জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৫ শতাংশ। এ ছাড়া আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল নীলফামারীতে সর্বনিম্ন ১৩ ডিগ্রি, পঞ্চগড়ে ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

যশোর

র্বনিম্ন ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে। এর আগের দিন শুক্রবারও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। টানা দুদিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রার সঙ্গে উত্তরের হিমেল হাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দিনের মধ্যভাগে কিছু সময়ের জন্য সূর্যের দেখা মিলছে। তবে ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহের কারণে কাজের জন্য শ্রমজীবীরা বাইরে যেতে পারছেন না।

গোয়ালন্দ

ঘন কুয়াশায় রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে পদ্মা নদীর চরে আটকে পড়া একটি লঞ্চের প্রায় শতাধিক যাত্রীকে উদ্ধার করেছে নৌ পুলিশ। গত শুক্রবার রাত ৮টার দিকে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে পাটুরিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে আসা এমএল মিজানুর লঞ্চটি কলবাগান এলাকায় পদ্মা নদীর চরে আটকে পড়ে। এ সময় জাতীয় জরুরি নম্বর ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে দৌলতদিয়া নৌ পুলিশের একটি দল দ্রুত লঞ্চটির যাত্রীদের উদ্ধার করে।