বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সহায়তায় চার সদস্যের চীনের আরেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল ঢাকায় এসেছে। বুধবার রাত ১০টা ১০ মিনিটে চিকিৎসকরা এভারকেয়ার হাসপাতালে পৌঁছান। বিএনপি মহাসচিব হাসপাতালে তাদেরকে স্বাগতম জানান।বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য জানান। চীনের চার চিকিৎসক হলেন- চি জিয়ানফান, ইয়ান ঝি, ঝং ইউহি ও ম্যাং হং ও।এর আগে বুধবার সকালে লন্ডন থেকে ঢাকায় আসেন যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রিচার্ড বিল। তিনি ইতিমধ্যে এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের বৈঠক করেন।গত ২৩ নভেম্বর খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। তার ফুসফুসে সংক্রামণ ধরা পড়লে তাকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। এভারকেয়ারের চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধায়নে মেডিকেল বোর্ড বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসায় কাজ করছেন।এই মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত হলেন যুক্তরাজ্য ও চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। চার দিন আগে চীনের ৫ সদস্যের আরও একটি টিম এভারকেয়ারে আসেন খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সহায়তা দিতে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ম্যাডামের জন্য যে মেডিকেল বোর্ড রয়েছে তার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্যের লন্ডন ক্লিনিক থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ভাচুর্য়ালি যুক্ত থাকছেন।তারা হলেন- যুক্তরাষ্ট্র থেকে অধ্যাপক হাবিবুর রহমান, অধ্যাপক রফিকউদ্দিন আহমেদ এবং প্রফেসর জন হ্যামিল্টন, প্রফেসর ডক্টর হামিদ রব, যুক্তরাজ্য থেকে প্রফেসর জন প্যাট্রিক, প্রফেসর জেনিফার ক্রস ও ডাক্তার জুবাইদা রহমান।জাহিদ হোসেন বলেন, লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের চেয়ারপারসনের সার্বক্ষণিক চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ সমন্বয় করছেন।এভারকেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা হলেন- অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী, অধ্যাপক নুরুদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক এ কিউ এম মহসিন, অধ্যাপক শামসুল আরেফিন, অধ্যাপক জিয়াউল হক, অধ্যাপক মাসুম কামাল, অধ্যাপক এজেড এম সালেহ, অধ্যাপক অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সাইফুল ইসলাম, ডা. জাফর ইকবাল, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, ডা. আল মামুন রয়েছেন।প্রায় ৮০ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। তবে লন্ডন ক্লিনিকে ঝুঁকির কথা চিন্তা করে লিভার প্রতিস্থাপন করেননি চিকিৎসকরা।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখনো বেশ উদ্বেগজনক পর্যায়েই রয়ে গেছে। বিশেষ করে তাঁর হৃদ্যন্ত্র, লিভার, কিডনি ও ফুসফুসের জটিলতা কাটছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দেখা যাচ্ছে চিকিৎসায় এ সমস্যাগুলোর একটির সামান্য উন্নতি হলে অন্যটির অবনতি ঘটছে; যা কয়েক দিন ধরে নানা মাত্রায় উদ্বেগজনকভাবে ওঠানামা করছে। তবে চিকিৎসকেরা এখনো এই অর্থে আশাবাদী যে তাঁরা খালেদা জিয়াকে যে চিকিৎসা দিচ্ছেন, তিনি তা গ্রহণ করতে পারছেন। ওষুধ কাজ করছে।চিকিৎসকেরা এখনো খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থাকে গুরুতর হিসেবে বিবেচনা করছেন। তাঁদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, আগামী কয়েকটি দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিডনি কার্যক্ষমতায় স্থিতিশীলতা ছাড়া তাঁর সামগ্রিক শারীরিক অবস্থায় স্থায়ী উন্নতি আসা কঠিন।যদিও কয়েক দিন ধরে সিসিইউতে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা গুজব চলছে। অনেকে তাঁর অবস্থা ‘জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বলে রটাচ্ছেন।তবে যেকোনো ধরনের গুজব ছড়ানো এবং গুজবে কান না দেওয়ার জন্য খালেদা জিয়ার পরিবার এবং দলের পক্ষ থেকে বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের অন্যতম এ জেড এম জাহিদ হোসেন।