মালয়েশিয়ায় ১৭৪ বাংলাদেশি আটকঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূতবিকেলে সেনাকুঞ্জে যাচ্ছেন খালেদা জিয়াআবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ফিরছে দেশবিমানবন্দরে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাবেন প্রধান উপদেষ্টা
No icon

আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ফিরছে দেশ

বহুল আলোচিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করে রায় দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। চতুর্দশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় থেকে এ ব্যবস্থা কার্যকর হবে।গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে এ রায় দেন। এর মাধ্যমে দুটি পৃথক সিভিল আপিল মঞ্জুর ও চারটি রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি করেন আদালত।সংক্ষিপ্ত রায়ে ১৪ বছর আগে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের দেওয়া সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়কে ত্রুটিপূর্ণ ও কলঙ্কিত উল্লেখ করে তা সম্পূর্ণ বাতিল করে দেন আদালত। ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরে এলো।তবে আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কার্যকর হবে আগামী চতুর্দশ সংসদ নির্বাচন থেকে। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানা যাবে।গতকাল আপিল বিভাগে অপর ছয় বিচারপতি ছিলেন বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি এস এম এমদাদুল হক, বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।

রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, এই রায়ের ফলে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহাল হলো। এতে গণতন্ত্র রক্ষা হবে। দেশ সংঘাতের রাজনীতি থেকে মুক্ত হবে।অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরেছে। তবে এর গঠন আগের মতো থাকবে, নাকি জুলাই সনদের বর্ণিত কাঠামো অনুযায়ী হবে তা পরবর্তী সংসদ নির্ধারণ করবে।গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তি-সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। তাতে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার ফেরার পথ তৈরি হয়।

আদালতের চিত্র

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চ গতকাল সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে এজলাসে আসেন। আসন গ্রহণের পর রায়ের সংক্ষিপ্ত আদেশ ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতি। মাত্র আট মিনিটে সংক্ষিপ্ত এ রায় পড়া শেষ হয়। এ সময় আপিল বিভাগ আইনজীবী, আইন কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল।

আদালতের রায়

রায়ে সর্বোচ্চ আদালত বলেন, ১৪ বছর আগে আপিল বিভাগের দেওয়া রায়টি ‘একাধিক ত্রুটিতে ত্রুটিপূর্ণ বলে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। সেই রায় সম্পূর্ণভাবে বাতিল করা হলো। রায়ে বলা হয়, সংবিধানের চতুর্থ ভাগের পরিচ্ছদ ২(ক)-এর নির্দলীয় সরকার-সম্পর্কিত বিধানাবলি, যা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী আইনের ৩ ধারায় সন্নিবেশিত হয়েছিল, এই রায়ের মাধ্যমে তা পুনরুজ্জীবিত ও সক্রিয় করা হলো। তবে সর্বোচ্চ আদালত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, পুনঃস্থাপিত ও পুনরুজ্জীবিত অনুচ্ছেদ ৫৮খ(১) এবং অনুচ্ছেদ ৫৮গ(২)-এর নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কিত বিধানাবলি কেবল ভবিষ্যৎ প্রয়োগযোগ্যতার ভিত্তিতে কার্যকর হবে। সংক্ষিপ্ত আদেশে আরও উল্লেখ করা হয়, পরে আদালত বিস্তারিত রায় বা পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা প্রদান করবেন।

সংক্ষিপ্ত রায়ে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট আপিল ও সিভিল রিভিউগুলো সর্বসম্মতভাবে মঞ্জুর করা হলো। আদালতে রিটকারী পক্ষে এ মামলায় শুনানি করেন আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া। বিএনপির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে ছিলেন মোহাম্মদ শিশির মনির।এ ছাড়া ইন্টারভেনর হিসেবে ছিলেন ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিকী, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, আইনজীবী মহসীন রশিদ ও ব্যারিস্টার শাহরিয়ার কবির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক।