ঘনকুয়াশায় কার্তিকেই শীতের আমেজআগামী সপ্তাহ থেকে শীতের আগমন: আবহাওয়া অফিসআফগানিস্তানে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পশীতে কাবু হবে দেশবাসী, আসতে পারে ১০ শৈত্যপ্রবাহঅক্টোবর মাসে সর্বোচ্চ মাসিক লেনদেনের রেকর্ড নগদের
No icon

গণভোট নিয়ে এবার উপদেষ্টাদের মতভিন্নতা

জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি এবং গণভোটের সময় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধের মধ্যে গণভোট নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের মতভিন্নতা রয়েছে। গত বৃহস্পতিবারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থিত ২২ উপদেষ্টার প্রায় সবাই একই দিনে গণভোট এবং নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছিলেন। তবে সোমবারের বৈঠকে কয়েকজন উপদেষ্টা সেই অবস্থান থেকে সরে আসেন।অন্তত তিনজন উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা থাকলে জাতীয় নির্বাচনের আগেও গণভোট করা যেতে পারে। তারা যুক্তি দিয়ে প্রশ্ন তোলেন, গণভোট না হলে সংস্কার কীভাবে বাস্তবায়ন হবে?

তারা বলেন, বিশেষ করে পিআর পদ্ধতিতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়টি সুরাহা করতে নির্বাচনের আগে গণভোট করা প্রয়োজন। ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচন নিশ্চিত করে, এর আগে গণভোট করা যায় কিনা তা দেখা উচিত।বৈঠক শেষে অন্য এক উপদেষ্টা বলেন, অধিকাংশ উপদেষ্টা জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোটের পরামর্শ দিয়েছেন। কয়েকজন আগে করার কথা বলেছেন। ঐকমত্য কমিশন আদেশের প্রথম খসড়া অনুযায়ী, আগামী সংসদের সংবিধান সংস্কার পরিষদ ২৭০ দিনের মধ্যে সংস্কার না করলে সংবিধান সংশোধনের খসড়া বিল পাস বলে গণ্য হবে। গণভোট হবে আদেশ ও খসড়া বিলের ওপর। গতকালের বৈঠকে একাধিক উপদেষ্টা অভিমত জানিয়েছেন, দ্বিতীয় খসড়া গ্রহণ করা উচিত হবে। যেখানে পরিষদের জন্য জুলাই সনদ অনুযায়ী সংস্কার নির্দেশনামূলক রাখা হয়েছে।বিএনপি আদেশ জারির বিরুদ্ধে। জামায়াত ও এনসিপি আদেশের প্রথম খসড়া অনুযায়ী সংস্কারের বাধ্যবাধকতা চায়। দুটি দলই চায় রাষ্ট্রপতি নয়; আদেশ জারি করবে গণঅভ্যুত্থানে গঠিত সরকার। একাধিক উপদেষ্টা জানান, এসব বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়নি। এক সপ্তাহে সমঝোতা না হলে সরকার একতরফা সিদ্ধান্ত দেবে।

সোমবার উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি সভার পর জানানো হয়, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি এবং গণভোটের সময় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধে সরকার মধ্যস্থতা করবে না। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে আলোচনায় সমঝোতার পথ বের করতে হবে। এক সপ্তাহের মধ্যে না পারলে সরকার সনদ ও গণভোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে বৈঠকের পর দুজন উপদেষ্টা সমকালকে বলেন, সমঝোতার জন্য সময় দেওয়া হয়েছে পরিষদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে। তারা জানান, গত বৃহস্পতিবারের বৈঠকে প্রায় সব উপদেষ্টা একই দিনে নির্বাচন এবং গণভোট আয়োজনে মত দিলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব প্রধান উপদেষ্টাকে দেওয়া হয়েছিল। দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টারা বৃহস্পতিবার থেকে চার দিন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপির সঙ্গে কথা বললেও সমঝোতা হয়নি। আগামী নির্বাচন থেকে পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠনে নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) প্রত্যাহারে বিএনপিকে রাজি করানো যায়নি। উচ্চকক্ষে পিআরের দাবি পূরণ হলে নিম্নকক্ষে পিআরের দাবি জামায়াত ছাড়তে রাজি হলেও ঘোষণা দিতে রাজি হয়নি। তাই সোমবারের বৈঠকে সপ্তাহখানেক সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টাও এতে একমত।

আলোচনার জন্য সাত দিন সময় দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে জামায়াতসহ আট দল। তবে তারা মধ্যস্থতার জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এনসিপি অভিযোগ করেছে, সরকারের একটি পক্ষ ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের বাইরে গিয়ে নিজেরাই ঐকমত্য কমিশন হওয়ার চেষ্টা করছে। সংস্কার নিয়ে সরকার সাপ-লুডু খেলছে। উপদেষ্টা পরিষদের আলোচনার আহ্বানে বিএনপি প্রতিক্রিয়া জানায়নি।সাত মাস সংলাপের পর গত ১৭ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষরিত জুলাই সনদে সংস্কারের ৮৪টি প্রস্তাব রয়েছে। পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন পদ্ধতিসহ ১৫ প্রস্তাবে বিএনপির নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে। দলটির দাবিতে স্বাক্ষরের আগের দিন তা সনদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বলা হয়, যে দল যে বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, ক্ষমতায় গেলে সেই অনুযায়ী সংস্কারের এখতিয়ার রাখবে। ২৮ অক্টোবর ঐকমত্য কমিশন সরকারের কাছে যে সুপারিশ করেছে, তাতে যুক্ত সনদে নোট অব ডিসেন্ট থাকলেও নেই জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংস্কার) আদেশের

দ্বিতীয় খসড়ার তপশিলে সংবিধান সংশোধন-সংক্রান্ত ৪৮টি সংস্কার প্রস্তাব যুক্ত করা হয়েছে। এ খসড়া অনুয়ায়ী গণভোট হবে আদেশ এবং এই তপশিলের ওপর। থাকবে না নোট অব ডিসেন্ট।বিএনপি একে প্রতারণা আখ্যা দিয়ে নির্বাচনের দিনে গণভোট চেয়েছে। জামায়াত নোট অব ডিসেন্টমুক্ত তপশিলের ওপর নভেম্বরে গণভোট চায়। এনসিপিও নোট অব ডিসেন্ট চায় না গণভোটে। এ নিয়ে বিরোধ চলছে দলগুলোর মধ্যে।এ বিরোধ কমাতে বৃহস্পতিবারের বৈঠকের পর পাঁচজন উপদেষ্টাকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। সোমবারের বৈঠকের পর একাধিক উপদেষ্টা সমকালকে বলেছেন, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে একাধিক আলোচনায় সমঝোতা সম্ভব হয়নি। তারা কিছু বিষয়ে সম্মত হলেও কিছু বিষয়ে ছাড় দিতে রাজি নয়। এ জন্য আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। তাই আলোচনার ভার দলগুলোর ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তারাই সিদ্ধান্ত নিক।একজন উপদেষ্টা বলেন, জুলাই সনদের অংশীদার প্রতিটি দল ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ের অগ্রসৈনিক। উপদেষ্টারা মনে করছেন, তারা জেদের কারণে ছাড় দিতে পারছে না। দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, তারা মনে করে, ছাড় গেলে রাজনৈতিক অবস্থান নষ্ট হবে। আবার পারস্পরিক অবিশ্বাস, সন্দেহ রয়েছে। তাই কেউ ছাড়ের ঘোষণা দিতে রাজি নয়। জেদ যাতে কমে, সে জন্যই এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে।