
জাপান থেকে পুরোনো প্রযুক্তির প্রিপেইড গ্যাস মিটার কিনছে বাংলাদেশ। সরকার টু সরকার (জিটুজি) পদ্ধতিতে এসব মিটার কেনার জন্য জাপান থেকে ঋণ নিতে হবে কঠিন শর্তে। ঋণ দেবে জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন (জেবিআইসি)। ভবিষ্যতে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে ঋণ যেন সংকটে না পড়ে, সে নিশ্চয়তাও চাইছে দেশটি। এই ঋণের আওতায় আট লাখ গ্যাস মিটার কিনতে বাংলাদেশের খরচ হবে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা। প্রতি মিটারের পেছনে ব্যয় হবে প্রায় ১২ হাজার টাকা। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আসন্ন জাপান সফরে এই ঋণসংক্রান্ত চুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের প্রিপেইড মিটার স্থাপন নীতিমালা অনুযায়ী গ্রাহক পর্যায়ে স্মার্ট গ্যাস মিটার বসানোর নিয়ম রয়েছে। কিন্তু জাপানে তৈরি পুরোনো প্রযুক্তির (নন-স্মার্ট) গ্যাস মিটার নেওয়া হলে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। এ জন্য প্রচলিত নীতিমালাও পরিবর্তন করতে হবে। এতে গ্রাহকের ভোগান্তি বাড়তে পারে।২০১৯ সালে আবাসিকে নতুন গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ করে সরকার। তাই এ খাতে বিদ্যমান ও প্রয়োজনীয় প্রকল্প ছাড়া বোঝা হওয়ার মতো প্রকল্প নেওয়ার ব্যাপারে সরকারের অনীহা রয়েছে। তারপরও জাপানের মিটার কিনতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এর নেপথ্যে নানা ধরনের চাপ রয়েছে বলে একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তবে তারা নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।
জাপানের মিটারে অনীহা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, তিতাসসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এ মিটার নিতে চাইছে না। জাপান জোর করে পুরোনো প্রযুক্তির এসব মিটার চাপিয়ে দিচ্ছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে জেবিআইসি ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে একটি নন-বাইন্ডিং সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়। ওই চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে দু পক্ষের মধ্যে সই হয় আরেকটি এমওইউ। এরপর পেট্রোবাংলা, তিতাস, কর্ণফুলী ও বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সঙ্গে মিটার স্থাপনে ঋণ দিতে একাধিক বৈঠক করে জেবিআইসি।জেবিআইসির ঋণে জাপান থেকে গ্রাহক পর্যায়ে প্রিপেইড গ্যাস মিটার কেনা নিয়ে গত ১৯ জানুয়ারি পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা করেন। ওই বৈঠক থেকে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির জন্য দুই লাখ, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনের জন্য দেড় লাখ ও বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির জন্য সাড়ে চার লাখ মিটার কেনার সিদ্ধান্ত হয়। জেবিআইসির শর্ত অনুসারে, এসব মিটার জাপানের অনদা ইনকরপোরেশনের কাছ থেকে কেনার কথা রয়েছে। মিটারগুলো দেশটির টয়োকেইকি কোম্পানির তৈরি।গত ২২ জানুয়ারি জেবিআইসি মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে ফেব্রুয়ারির শুরুতে একটি সমঝোতা কমিটি গঠনের অনুরোধ করে। চিঠিতে এ প্রকল্প জাপান সরকারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলেও উল্লেখ করা হয়। ফলে ফেব্রুয়ারির বৈঠকে জাপানের অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিও উপস্থিত থাকবে বলে জানায় জেবিআইসি। ৩ ও ৪ ফেব্রুয়ারি সমঝোতা বৈঠকে ঋণের শর্ত নিয়ে আলোচনা হয়।