ঈদের ছুটিতেও খোলা থাকবে সব কাস্টম স্টেশনবিদেশে কোর্স ফি পাঠানো সহজ করলো বাংলাদেশ ব্যাংকপাপুয়া নিউ গিনিতে ৬.৪ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পবাড়ছে পানি বড় বন্যার শঙ্কাসারাদেশে সরকারি ১৪ হাসপাতালে বন্ধ আইসিইউ সেবা
No icon

সারাদেশে সরকারি ১৪ হাসপাতালে বন্ধ আইসিইউ সেবা

দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন চান্দু মিয়া। জটিলতা বাড়ায় রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। তবে এই হাসপাতালে আইসিইউ সেবা চালু না থাকায় সাধারণ ওয়ার্ডে ঝুঁকি নিয়ে চলছিল তাঁর চিকিৎসা।এটি গত রোববারের ঘটনা। গতকাল মঙ্গলবারও আইসিইউ সেবা চালু হয়নি। এমন পরিস্থিতি শুধু সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নয়; লোকবল না থাকায় সোহরাওয়ার্দীসহ দেশের বড় ১৪টি সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ সেবা বন্ধ রয়েছে। এতে গত চার মাসে প্রায় ১৪ হাজার রোগী প্রাণরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে প্রতিদিন অন্তত ৫০ জনের এমন জরুরি সেবা প্রয়োজন হয়। কিন্তু সেবা মেলে না। এর মধ্যে যাদের সামর্থ্য আছে, তারা বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে আইসিইউ সেবা নেন। দরিদ্র রোগীরা টাকার অভাবে এ সেবা নিতে পারেন না।সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. শফিউর রহমান বলেন, জনবল সংকটের কারণে চার মাস ধরে এই জরুরি সেবা বন্ধ আছে। জনবল চেয়ে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো উত্তর আসেনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় শ্বাসকষ্টের রোগী বেড়ে যাওয়ায় কভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস (ইআরপিপি) প্রকল্পের অধীনে ৪৮ জেলায় সরকারি হাসপাতালে ১০ শয্যার আইসিইউ ইউনিট স্থাপন করা হয়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ২৩ জেলায় আইসিইউ সেবা চালু হয়েছিল। জনবল সংকটে কিছু জেলায় আইসিইউ সেবা বন্ধ হয়ে যায়।প্রকল্পের নথিতে দেখা যায়, ২০২০ সালে ৪৮ জেলায় হাসপাতালে ১০ শয্যার আইসিইউ ইউনিট স্থাপন করতে ৫১২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। সে হিসেবে একটি আইসিইউ প্রতিস্থাপনে খরচ হয়েছে গড়ে ১০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। ফলে ১৪টি হাসপাতালের আইসিইউতে এখন ১৪৯ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ বলেন, ১৪ হাসপাতালে আইসিইউ সেবা সচল রাখা গেলে বহু মানুষের জীবন রক্ষা হতো। দুঃখের বিষয়, সচল করা যাচ্ছে না। এতে একদিকে রোগীর ভোগান্তি বাড়ছে, অন্যদিকে স্বাস্থ্যসেবায় প্রভাব পড়ছে। যত দ্রুত সম্ভব আইসিইউ সেবা সচল করার ব্যাপারে রাষ্ট্রের উদ্যোগ নেওয়ার দরকার।

যেসব হাসপাতালে আইসিইউ সেবা বন্ধ আছে সেগুলো হলো ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজে হাসপাতাল, বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, নারায়ণগঞ্জের জেনারেল হাসপাতাল (ভিক্টোরিয়া), শেরপুর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল, টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল, যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল, সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যা হাসপাতাল, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল, বাগেরহাট জেলা সদর হাসপাতাল, মাদারীপুর জেলা সদর হাসপাতাল এবং মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, কভিড-১৯ ইআরপিপি প্রকল্পের মাধ্যমে অস্থায়ীভাবে মেডিকেল অফিসার, নার্স, টেকনোলজিস্ট, স্বাস্থ্যকর্মীসহ ১ হাজার ৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব জনবল দিয়ে এতদিন আইসিইউ সেবা সচল ছিল। গত ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে চাকরি হারান চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী। নতুন জনবল চেয়ে হাসপাতালগুলো চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে।