আমরা এমন বাজেট দিবো যা হবে বাস্তবসম্মত ও বাস্তবায়নযোগ্য : ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সবার সহযোগিতায় স্বনির্ভর জাতি গড়ে তোলা সম্ভব: ড. ইউনূসকলকাতার হোটেলে ভয়াবহ আগুনে ১৪ জনের মৃত্যুগাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৫১ ফিলিস্তিনি নিহতটানা তিন দিনের ছুটিতে রাজধানীতে ৩ বড় সমাবেশ
No icon

রাখাইনে মানবিক করিডর স্পর্শকাতর, ক্ষুব্ধ বিএনপি

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জন্য বাংলাদেশের মানবিক করিডর দেওয়ার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রসর হওয়ার বিষয়টিকে স্পর্শকাতর বলছে বিএনপি। সরকারের এই পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ দলটি। দেশের নিরাপত্তার দিক থেকে এই করিডর দেওয়া হুমকি হবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট আলোচনার পাশাপাশি চীন ও ভারতের অবস্থান জানার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন আলোচনা হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।বিএনপি নেতারা বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত নয়। ফলে দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব সংক্রান্ত বিষয়ে জনগণের ম্যান্ডেটবিহীন এই অনির্বাচিত সরকারের এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই। দলটির শঙ্কা, সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা এবং রাজনৈতিক মতৈক্য ছাড়া এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলে তা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই সরকারকে রাজনৈতিক মতৈক্যের মাধ্যমে এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ বিএনপির।

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলেন, বিএনপি মিত্র দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের এ ইস্যুতে কী পদক্ষেপ নিচ্ছে সেগুলো নিয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে সংবাদ সম্মেলন করবে।জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা এখনও বিষয়টা (রাখাইনের জন্য মানবিক করিডর দেওয়া) পুরোপুরি জানি না। পত্রপত্রিকায় দেখেছি যে, সরকার একতরফাভাবেই দেশের জনগণ তথা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা না করে এ ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা এটাও শুনেছি যে, মানবিক কারণে তারা এই করিডর দেবে। কিন্তু সেটা কীভাবে দেবে, তা জানি না। আমরা এটাও শুনেছি যে, কিছু শর্ত আছে- কিন্তু সে শর্তগুলো কী, এগুলো আমরা জানি না। তাই আমরা মনে করি, সরকারের এই বিষয়গুলো জাতিকে সুস্পষ্টভাবে জানানো উচিত এবং কী কী শর্ত, সেগুলোও পরিষ্কারভাবে জানানো দরকার। আমরাও এ বিষয়ে নানা তথ্য-উপাত্ত নিয়ে জানার চেষ্টা করছি এবং তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার পর আমরা আমাদের দলের তরফ থেকে এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান ব্যক্ত করব।

অবশ্য প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গতকাল মঙ্গলবার বলেছেন, কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডর স্থাপনে অন্তর্বর্তী সরকার জাতিসংঘ বা অন্য কোনো সংস্থার সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি। তবে তিনি বলেন, সরকার মনে করে, যদি জাতিসংঘের নেতৃত্বে রাখাইনে মানবিক সহায়তা পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশ লজিস্টিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত থাকবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ নীতিগতভাবে সম্মত। তবে এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।এর আগে রাখাইনে মানবিক করিডর দেওয়া নিয়ে গত রবিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, এতটুকু আপনাদের বলতে পারি, নীতিগতভাবে আমরা এতে সম্মত। কারণ, এটি একটি হিউম্যানিটেরিয়ান প্যাসেজ (মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ) হবে। কিন্তু আমাদের কিছু শর্ত রয়েছে। সেই শর্তাবলি যদি পালিত হয়, আমরা অবশ্যই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।পররাষ্ট্র উপদেষ্টার এমন বক্তব্যের পরদিন গত সোমবার ঠাকুরগাঁওয়ে এক গণসংযোগ অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যোগাযোগের জন্য মানবিক করিডর দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের কথা বলে নেওয়া উচিত ছিল। কারণ এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের শান্তি-শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা জড়িত রয়েছে। তিনি আরও বলেছিলেন, জাতিসংঘ যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে আমাদের আপত্তি নেই। তবে এটা হতে হবে সব মানুষের সমর্থনে। আমরা আরেকটা গাজায় পরিণত হতে চাই না।

এদিকে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার সঙ্গে আরাকান আর্মির চলমান সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা রাখাইনের জন্য করিডর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের মতে, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে এমন করিডর চালুর সিদ্ধান্তের আগে এ বিষয়ে রাখাইনের বিবদমান পক্ষগুলোর ঐকমত্য থাকা জরুরি। তাদের মধ্যে ঐকমত্য না হলে এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন বিঘিত হতে পারে। পাশাপাশি রয়েছে নিরাপত্তা ঝুঁকি। ফলে এমন একটি বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রাজনৈতিক পরিম-লসহ দেশের অভ্যন্তরে আলোচনা অপরিহার্য।এই অবস্থায় গত সোমবার রাতে গুলশানে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বিএনপি মনে করছে, সরকার এককভাবে স্পর্শকাতর একটা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। নিরাপত্তা বিবেচনায় যে বিষয়টি নিয়ে দেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা ইতোমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।বৈঠকে বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, মিয়ানমারে যেখানে একটা যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে, দেশটির সামরিক জান্তার সঙ্গে আরাকান আর্মির সংঘাত চলছে, আরাকান আর্মিকে কোণঠাসা করতে জান্তা সরকার সব ধরনের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে- এমন প্রেক্ষাপটে রাখাইনে বাংলাদেশের মানবিক করিডর দেওয়া কতটুকু যুক্তিযুক্ত হবে এবং দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিষয়টি হুমকি হবে; কী হবে না- তা নিয়ে যথেষ্ট আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।

বৈঠকে নেতারা আরও বলেন, শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসন আমলে রাখাইন রাজ্য থেকে ১০ লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে বাধ্য করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। এটি ইতোমধ্যে বাংলাদেশের জন্য এক বিরাট বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন অবস্থায় জাতিসংঘ রাখাইনে যে মানবিক বিপর্যয়, দুর্ভিক্ষের কথা বলছে, সেটি নিয়ে বিএনপিও উদ্বিগ্ন। কিন্তু করিডর দেওয়ার আগে রাখাইন রাজ্য নিয়ে প্রতিবেশী আরও দুটি শক্তিশালী দেশ চীন ও ভারতের অবস্থান কী, সেটা নিয়েও আমাদের ভাবার যথেষ্ট প্রয়োজন, অবকাশ রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা এবং রাজনৈতিক মতৈক্য ব্যতিরেকে এটা করলে তা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই চরম স্পর্শকাতর এমন একটি ইস্যুতে সরকারের রাজনৈতিক মতৈক্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।বৈঠকে বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, একটি দায়িত্বশীল ও দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল হিসেবে এই ইস্যুতে তারা তাদের মিত্র দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে। একই সঙ্গে রাখাইনের বাস্তব পরিস্থিতি এবং এটা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কী করছে, সেগুলোর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করবে। এরপর সংবাদ সম্মেলন করে জাতির সামনে পুরো বিষয়টি তুলে ধরবে। পাশাপাশি সেখানে জনগণের ম্যান্ডেটবিহীন একটি অনির্বাচিত সরকারের যে এ ধরনের একটা স্পর্শকাতর ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই, সে বিষয়টিও তুলে ধরবে।