
ঈদের আপ্যায়ন মানে সেমাই। সারা বছর কমবেশি বিক্রি থাকলেও ঈদের আগে এ খাদ্যদ্রব্যটির চাহিদা ও বিক্রি কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এবারও রোজার শেষভাগে চাহিদা বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে চিনি, কিশমিশ, বাদাম ও মসলাসহ অন্যান্য ঈদপণ্যের চাহিদাও। গত কয়েক দিনে এসব পণ্যের বাজারে ভিড় বেড়েছে। সুযোগ পেয়ে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা।গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খোলা সেমাইয়ের পাশাপাশি প্যাকেট সেমাইয়ের দামও বেড়েছে। প্যাকেটজাত ২০০ গ্রাম সেমাই ব্র্যান্ডভেদে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া স্পেশাল লাচ্ছা সেমাইয়ের প্যাকেট ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে খোলা লাচ্ছার কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৪০ টাকা পর্যন্ত। আর খোলা চিকন সেমাইয়ের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত।বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ উপলক্ষে বাহারি নাম ও স্বাদের সেমাইয়ের পসরা সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ২০০ গ্রাম প্যাকেটের পাশাপাশি বাংলা সেমাই (খোলা লাচ্ছা), রঙিন লাচ্ছা ও চিকন সেমাইয়ের কদর বেড়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, প্রতিদিনের সদাইপাতির পাশাপাশি এখন অনেকেই সেমাই ও মিষ্টান্ন তৈরির সামগ্রী কিনে রাখছেন। এতে এসব পণ্যের বাজার জমে উঠেছে।
রাজধানীর কদমতলী এলাকার খুচরা বিক্রেতা মিলন হোসেন বলেন, ঈদের আর কয়েক দিন বাকি। এখন ক্রেতারা সেমাই, দুধ, চিনি, বাদাম, কিশমিশসহ মসলার কেনাকাটা করছেন। এতে বিক্রিও বেড়েছে। কাঁচামালের বাড়তি দামের কারণে প্রতিবছরই সেমাইয়ের দাম বাড়ে। এবার খোলা লাচ্ছার দাম কেজিতে ২০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে। চিকন সেমাইয়ে ২০ টাকা বাড়তি রয়েছে। প্যাকেট সেমাইয়ের দামও বাড়তি।রাজধানীর মৌলভীবাজারের সেমাই বিক্রেতা হুমায়ুন গাজী বলেন, সপ্তাহখানেক দোকানে নতুন সেমাই এসেছে। প্রথম দিকে বিক্রি খুব একটা হয়নি। বুধবার থেকে বিক্রি বেড়েছে। দাম কিছুটা বাড়তি রয়েছে।কারওয়ানবাজার ঘুরেও দেখা গেছে, দোকানগুলোতে খোলা সেমাইয়ের সরবরাহ বেড়েছে। তবে দাম বাড়তি বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এখানকার খুচরা বিক্রেতা মোহাম্মদ মুজাহিদ বলেন, খোলা লাচ্ছার কেজি ২০০ টাকা থেকে শুরু। রঙিন লাচ্ছার দাম আরেকটু বেশি।
খোলা সেমাই প্রস্তুতকারকরা বলছেন, গত বছরের চেয়ে এবার ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি চাহিদা রয়েছে। ঈদের আগ মুহূর্তে আরও বাড়তে পারে। এবার দাম সেভাবে বাড়েনি। যেটুকু বেড়েছে তা খুবই সামান্য।কেরানীগঞ্জের সেমাই প্রস্তুতকারক তামিম এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার মোহাম্মদ সালেহ উদ্দিন জানান, কোম্পানির প্যাকেট সেমাইয়ের সঙ্গে পেরে ওঠা কঠিন। তবে দাম তুলনামূলক কম হওয়া নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্তরা খোলা সেমাইয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।সেমাই প্রস্তুতকারকদের অভিযোগ, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নকল ও ভেজাল সেমাই তৈরি করে বাজারে ছাড়ায় খোলা সেমাইয়ের বাজার নষ্ট হচ্ছে। তারা এসব নকল ও ভেজাল সেমাই বিক্রি বন্ধ করতে সরকারের কঠোর নজরদারির দাবি জানিয়েছেন।বাংলাদেশ ব্রেড, বিস্কুট অ্যান্ড কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি জালাল উদ্দিন বলেন, এক সময় ঈদের আগে অনেক বেকারি সেমাই তৈরি করত। আলাদা একটা বাণিজ্য ছিল। করপোরেটদের আধিপত্যে এখন সেটা হারিয়ে গেছে।
এদিকে মিষ্টান্ন তৈরিতে ব্যবহৃত উপাদানের দামও বেড়েছে। সেমাই কেনা গেলেও সেমাই তৈরির দুধ, চিনি কিংবা কিশমিশ-বাদাম কিনতে হাত পুড়ছে স্বল্প আয়ের মানুষের।সপ্তাহের ব্যবধানে অনেক দোকানে চিনির কেজিতে ১০ টাকা বাড়তি রয়েছে। প্রতি কেজি ১৪০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। কিশমিশের কেজি ৬০০ টাকা থেকে বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে। চীনা বাদামের কেজি ২০০ টাকা এবং কাজু বাদাম ১ হাজার ২০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। ভালো মানের কাজুর দাম আরও বেশি।বাসাবো এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, কেবল সেমাই কিনলেই তো আর চলে না। সেমাই তৈরির দুধ, চিনি, বাদাম, কিশমিশও লাগে। গত সপ্তাহে ১৩০ টাকা কেজি চিনি কেনা গেছে। এখন তা ১৪০ টাকা কিনতে হয়েছে। সেমাই, দুধ, বাদামসহ অন্যান্য পণ্যের দামও বাড়তি।এদিকে মসলার বাজারেও উত্তাপ বেড়ে যাওয়ায় বিব্রত কদমতলীর বাসিন্দা সেলিম হোসেন। তিনি বলেন, ঈদের দিন রান্নার নানা পদের জন্য মসলারও প্রয়োজন হয়। এই সুযোগে দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা। এতে ঈদের আয়োজনে খরচ বেড়েছে।মসলার খুচরা বিক্রেতারা জানান, ঈদকে ঘিরে এলাচের দাম বেড়েছে অতিরিক্ত। ভালো মানের এলাচের কেজি ৪ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ৫ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। একটু নিম্নমানের এলাচ কিছুটা কম দামে মিলছে। লবঙ্গের কেজি ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা, জিরা ৭ থেকে সাড়ে ৭০০ টাকা। দারুচিনির দামও ৬০০ টাকা থেকে বেড়ে ৮০০ টাকায় পৌঁছেছে। এ ছাড়া গোলমরিচ ৭০০ টাকা, তেজপাতা ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।