
দীর্ঘ সিয়াম সাধনার পর আনন্দের বার্তা নিয়ে মুসলিম উম্মাহর দ্বারপ্রান্তে হাজির পবিত্র ঈদুল ফিতর। এখন কেবল পশ্চিমাকাশে শাওয়ালের নতুন চাঁদের অপেক্ষা। চিকন সে চাঁদের ক্ষীণ আলোই আনন্দের তীব্র আভা ছড়াবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের হৃদয়ে; বিশ্বজুড়ে। খুশির আবহে পূর্ণতা পাবে ঈদের সব আয়োজন।মুসলমানদের অন্যতম এই প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর ঠিক কবে অনুষ্ঠিত হবে, তা জানা যাবে আজ রোববার সন্ধ্যায়। আজ চাঁদ দেখা গেলে কাল সোমবার ঈদ। চাঁদ না উঠলে মঙ্গলবার ঈদুল ফিতর।আজ সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে বৈঠকে বসবে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। সেখানেই সারাদেশের প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে নির্ধারণ করা হবে ঈদের দিন-তারিখ।ঈদ কেবল খুশির নয়, ঈদ ক্ষমারও। ঈদ ধনী-গরিব, উপর-নীচের ভেদাভেদ ভুলিয়ে দেওয়ার উপলক্ষ। ফলে ঈদ হয়ে উঠছে সামাজিক উৎসব। রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের রমজান শেষে শাওয়ালের নতুন চাঁদ তাই আত্মার প্রশান্তিরও উৎস। ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশীর ঈদ,/ তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ।/ তোর সোনা-দানা, বালাখানা সব রাহে লিল্লাহ/ দে যাকাত, মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিঁদ।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রোজা ও ঈদের মর্মবাণীকে তুলে ধরেছেন এই কটি পঙ্ক্তিতে। চাঁদ যেমন ঈদের আগমনী বার্তা, তেমনি তাঁর এই গানটি বাংলাভাষীদের কাছে হয়ে উঠেছে চাঁদ ওঠার অনন্য বার্তা। এই সময়ে রেডিও, টেলিভিশনে এই গানের সুর বেজে ওঠা মানে চাঁদ উঠেছে, ঈদ শুরু।ঈদের আনন্দ সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে পথের ক্লান্তি ভুলে, ক্লেশ অগ্রাহ্য করে মানুষ ছুটে যাচ্ছে আপন নীড়ে, প্রিয়জনের কাছে। ঈদগাহগুলো তৈরি হচ্ছে মুসল্লিদের জন্য। ঈদুল ফিতরের একটি ওয়াজিব বা আবশ্যিক আমল হলো ঈদের নামাজ আদায় করা। মালিক-শ্রমিক ধনী-গরিব সবাই সারিবদ্ধভাবে এক কাতারে দাঁড়িয়ে সেজদায় নত হন। সাম্য ও সম্প্রীতির কী এক অপূর্ব দৃশ্য! নামাজ শেষে একে অপরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে কোলাকুলি করেন, জীর্ণ সম্পর্ক যেন ঝালিয়ে নেন সবাই। ঈদের আসল উৎসব শুরু হয় এই নামাজ আদায়ের মাধ্যমে।সাধারণত সৌদি আরব বা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ঈদ উদযাপনের পরদিন বাংলাদেশে ঈদ হয়ে থাকে। আবার সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে একই দিনে বাংলাদেশের কিছু এলাকায় কেউ কেউ ঈদ উদযাপন করে আসছেন। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এবার লম্বা ছুটি পেয়েছেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
নানা আয়োজন ঈদের আনন্দ উদযাপনে ঘরে ঘরে চলবে ফিরনি-পায়েসের আয়োজন। মেহেদিতে হাত রাঙাবে কিশোরী-তরুণীরা। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দৈনিক পত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত হবে ঈদের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। ঈদে হাসপাতাল, কারাগার, এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, শিশুসদনে সরকারিভাবে উন্নতমানের খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা করা হবে।পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ বছর ঈদ র;্যালি বের করার কর্মসূটি আছে। সকাল ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামিআয় ঈদুল ফিতরের প্রথম জামাতের পর এই র;্যালি শুরু হবে। র;্যালিতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান নেতৃত্ব দেবেন। র;্যালিটি টিএসসি হয়ে স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে গিয়ে শেষ হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা র;্যালিতে অংশগ্রহণ করবেন।